রাজ্য সরকার ১৭ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি। সে জন্য ৬১ কোটি টাকা আটকে দিল কেন্দ্র।
পালস পোলিও এবং রুটিন টিকাকরণ কর্মসূচি প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের আশঙ্কা, এর ফলে সদ্যোজাত থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা শিশু স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে। শিশুদের পালস পোলিও এবং টিকাকরণ কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য বছরে দু’বার টাকা দেয় কেন্দ্র। নিয়ম হল, প্রথম বারের টাকা পুরো খরচের পরে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) দিলে তবেই মিলবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা। রাজ্যের বক্তব্য, এত দিন এই নিয়মে শিথিলতা দেখালেও এ বার বেঁকে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের সাফ কথা, অনেক হয়েছে, আর নয়। প্রথম কিস্তির টাকা খরচের ‘ইউসি’ না দিলে পরের কিস্তির টাকা দেওয়া হবে না। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের প্রথম কিস্তিতে ৫১ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। রাজ্য তার মধ্যে ৩৪ কোটি টাকা খরচের ‘ইউসি’ দিতে পারলেও বাকি ১৭ কোটি টাকার দিতে পারেনি। এ জন্য দ্বিতীয় কিস্তির ৬১ কোটি টাকা আটকে দেয় দিল্লি।
কেন এ বার তাঁরা এত কঠোর, তার ব্যাখ্যা দিয়ে কেন্দ্রীয় টিকাকরণ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার প্রদীপ হালদার বলেন, “দিচ্ছি-দেব করে অনেক রাজ্য নতুন বছরের ছ’মাস পার করে দিয়েও পুরনো বছরের ‘ইউসি’ দেয় না। টাকা পেয়ে যায় বলে রাজ্যগুলি আমাদের নিয়মের তোয়াক্কা করে না।” কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী-র অভিযোগ, “রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর অনেক দিন ধরেই ‘ইউসি’ দেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করছে। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। উনি চিঠির উত্তরটুকুও দেননি।”
কেন্দ্রের এই কঠোর মনোভাব অবশ্য মানতে নারাজ রাজ্যের অফিসারেরা। তাঁদের যুক্তি, সময়ে ‘ইউসি’ দিতে না পারার ঘটনা আগেও হয়েছে। কিন্তু কখনও এই ভাবে টাকা আটকে দেওয়া হয়নি। তাঁদের কথায়, “৩৪ কোটি টাকার ‘ইউসি’ দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে পরের কিস্তির অন্তত কিছু টাকা পাঠালো না কেন কেন্দ্র? এতে তো শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি সঙ্কটে পড়বে।” রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সতীশ তিওয়ারির বক্তব্য, “কেন্দ্র এখন এমনই মনোভাবই নিয়েছে। সব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে বলেছে, একটি ‘ইউসি’ বাকি থাকলেও পরের কিস্তির টাকা আটকে দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রক ওদের নাকি সে রকমই নির্দেশ দিয়েছে।” স্বাস্থ্যসচিবের মন্তব্য, “আমাদের কিছু করার নেই। ওদের টাকার উপর আমরা নির্ভরশীল।”
কিন্তু ১৭ কোটি টাকার ‘ইউসি’ দেয়নি বলে ৬১ কোটি টাকা আটকে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যা, “প্রশ্নটা নিয়ম-নীতির। রাজ্যগুলি বছরের পর বছর ইউসি জমা দেয় না বলে অডিটের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়।” তাঁর অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গ ২০১১-১২ সালের অনেক ‘ইউসি’-ই জমা দেয়নি। তাই কঠোর হতে বাধ্য হয়েছি।” |