গত বারের পঞ্চায়েত ভোট থেকে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে-পরে কখনও এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও সুভাষ চক্রবর্তী, কখনও তথাগত রায়। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে ‘মতুয়া মহাসঙ্ঘে’র প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) আশীর্বাদ চাইলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
আজ, রবিবার থেকে গাইঘাটায় শুরু হচ্ছে মতুয়া ধর্মমহামেলা। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এই মেলায় ভিড় জমান। তার আগে শনিবার দুপুর নাগাদ ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছে যান প্রদীপবাবু। সঙ্গে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সম্রাট তপাদার, জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নারায়ণ সাহা, বনগাঁ শহর কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ্র-সহ দলের নেতা-কর্মীরা। বড়মার সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “অনেকদিন ধরেই আসার ইচ্ছা ছিল। অন্য কোনও কারণে নয়। বড়মার আশীর্বাদ নেওয়ার জন্যই এখানে এসেছি।” |
প্রদেশ সভাপতি এই সাক্ষাতের পিছনে কোনও কারণ নেই বলে দাবি করলেও, রাজনৈতিক মহল কিন্তু মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মতুয়া ভোট টানতেই কংগ্রেসের এই কৌশল। এ দিন বড়মার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার সময় কয়েকজন মতুয়া ভক্তের বিক্ষোভের মুখেও পড়েন প্রদীপবাবু। ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তুলতে প্রদীপবাবুরা এসেছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। যদিও বড়মার ছোট ছেলে তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বলেন, “আমি ছেলে হিসেবে আজ মায়ের সঙ্গে ছিলাম। ঠাকুরবাড়িতে সবাই আর্শীবাদ নিতে আসতে পারেন। তবে প্রদীপবাবু কী উদ্দেশ্যে এসেছিলেন বলতে পারব না।” তৃণণূল নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পঞ্চায়েতের আগে প্রদীপবাবু বড়মার কাছে ভোট ভিক্ষা করতে এসেছিলেন। কিন্তু ওঁর ঝুলিতে মতুয়া ভোট কিংবা মায়ের করুণা কিছুই জমা পড়েনি।”
এ দিন প্রদীপবাবু ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছে প্রথমে যান হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে। তারপরে যান বড়মার কাছে। বড়মা তখন সিঁড়িতে বসেছিলেন। কাছেই ছিলেন বড়মার দুই ছেলে কপিলকৃষ্ণ ও মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। প্রদীপবাবু দু’টি শাড়ি ও ফল দিয়ে বড়মাকে প্রণাম করেন। প্রথমে আশীর্বাদ করতে ইতস্তত করলেও পরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধে প্রদীপবাবুকে আশীর্বাদ করেন বড়মা। মতুয়া মেলার জন্য প্রদীপবাবুর কাছে বিশেষ ট্রেনের অনুরোধ করেন সঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কেডি বিশ্বাস ও গণপতি বিশ্বাস। বিষয়টি রেলমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই অবহিত করেছেন বলে জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
প্রসঙ্গত, সারা রাজ্যে ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভাল প্রভাব রয়েছে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকবার বড়মার দেখা করতে গিয়েছিলেন। তার ফলও মিলেছিল। গত পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট তৃণমূলের পক্ষেই ছিল। জোট ভেঙে যাওয়ার পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে এই প্রচেষ্টা কতখানি সফল হবে সেটা জানার জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছুদিন। |