রাজ্যে যে সব কারখানা এখনও সচল, সেগুলিতে কথায় কথায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার সিঙ্গুরের রতনপুরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “গেটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কথায় কথায় কারখানা বন্ধ করা যাবে না।” দলের শ্রমিক সংগঠনের প্রকাশ্য সম্মেলনে ওই হুঁশিয়ারির পাশেই অকারণে কারখানা বন্ধ না করার জন্য মালিকপক্ষকে সতর্ক করেছেন তিনি।
এমনিতেই বেসরকারি শিল্পের জন্য সরকার জমি না নেওয়ার নীতিতে অনড় থাকায় রাজ্যে শিল্প আসছে না বলে নিয়মিত তৃণমূলকে বিঁধে থাকেন বিরোধীরা। শাসক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাপটে ব্যবসা করতে গিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে সমস্যায় পড়ার ঘটনাও হামেশাই শোনা যায়। তার উপরে শ্রমিক-মালিক বিরোধের জেরে কারখানা বন্ধ হওয়ার দৃষ্টান্তও প্রচুর। |
শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে শুক্রবারই কল্যাণীর একটি বিদ্যুতের তার তৈরির কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সমস্যায় পড়েছেন কারখানার প্রায় ৬০০ শ্রমিক। গত দু’বছরে এ রাজ্যে নানা কারণে ছোট-মাঝারি মিলিয়ে সাড়ে চারশোরও বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই জাতীয় কারখানা নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত।
যে সিঙ্গুরের মাটিতে আন্দোলনের জেরে এক সময়ে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের কপালে ‘শিল্পবিরোধী’ তকমা জুটেছিল, সেই মাটিতেই এ দিনের সম্মেলন থেকে রাজ্যের ‘শিল্পবান্ধব’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা হয়। ঠিক যেমন বার্তা দেওয়া হয়েছিল, কলকাতায় টাটা গোষ্ঠীর পাঁচ তারা হোটেলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নতুন ইউনিট আত্মপ্রকাশ করার পরেই তা ভেঙে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। ওই শাখা ভেঙে দিয়ে পার্থবাবু বলেছিলেন, “পর্যটন ব্যবসায় এ ভাবে ঝান্ডা তুলে রাজনীতি করার চেষ্টা মানা হবে না।” এ দিন আইএনটিটিইউসি-র সদস্য সমর্থকদের প্রতি শিল্পমন্ত্রীর পরামর্শ, “শ্রমের অধিকার এবং কাজের অধিকার শ্রমিকদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কর্মস্থলে সমস্যা থাকলে জেলা প্রশাসনকে জানান। সমস্যা না মিটলে সরাসরি রাজ্যে জানান।”
মালিকদের প্রতি শিল্পমন্ত্রীর বার্তা, “বহু মালিক পুরনো কায়দায় চালাতে চাইছেন। আমরা কিন্তু নজর রাখছি। অকারণে কারখানার দরজা বন্ধ করা যাবে না। রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার প্রসঙ্গে পার্থবাবুর দাবি, “এখনই রাজ্যে ২৫৭টি শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। তা কার্যকর হলে তিন লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান হবে।” শিল্পে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দাবি করে মুকুল রায় বলেন, “সমালোচকরা বলছেন, এ রাজ্যে একেবারেই শিল্প হচ্ছে না! মাত্র ২৩ মাসের পরিসরেই যে উন্নয়ন হয়েছে, তা সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে না। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু দাবি করেন, বাম আমলে প্রচুর শ্রমদিবস নষ্ট হত। এখন তা অতীত।
সম্মেলনে মলয় ঘটক, বেচারাম মান্না, গৌতম দেব, রচপাল সিংহ, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন উপস্থিত ছিলেন। অনেক দিন পরে দলের এত মন্ত্রী-নেতার সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেল সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকেও। |