প্রেম গিয়েছে চুরি!
সঙ্গে নগদ টাকা। গয়নাও। কিন্তু টোপ ছিল পুলিশের হাতেই।
চোর-ডাকাতের সমস্যা বসিরহাটে নতুন নয়। কিন্তু এই নতুন অভিযোগে বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছিল থানার বড়বাবুর। মাঝে-মধ্যেই থানায় হাজির হয়ে সুন্দরী তরুণীরা জানাচ্ছিলেন, প্রেমের অভিনয় করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তের যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছিলেন, তা প্রায় এক। কিন্তু মিলছিল না ঠিকানা।
অবশেষে শুক্রবার ধরা পড়ে যায় বসিরহাটের ‘লেডি কিলার’। পুলিশের বুদ্ধিতে তার জন্য ফাঁদ পেতেছিলেন এক ‘প্রেমিকা’। নিজেরই জালে জড়িয়ে প্রেমিক আপাতত শ্রীঘরে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের আসল নাম শেখ আবদুল্লা। সুঠাম চেহারা। বাড়ি এলাকারই ভ্যাবলা মাঠপুকুরে। সম্পন্ন গেরস্থ বাড়ির বছর চব্বিশের আদরের দুলাল আবদুল্লার নিজের আছে প্রায় দেড় লাখের মোটরবাইক। পরনে ব্র্যান্ডেড শার্ট। অনেক সময়ে বন্ধুদের দামি গাড়িও সে নিয়ে যেত প্রেমিকাদের বশ করতে। আসল নাম ছাড়াও ছিল সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, তারক মণ্ডলের মত হরেক ছদ্মনাম। সঙ্গী ছিল শেখ লালু, শেখ ইকবাল-সহ বেশ কিছু বন্ধু। দলে ছিল এক মহিলাও। সকলকেই পুলিশ খুঁজছে। |
শুধু ভাব-ভালবাসাই নয়, প্রেমের পাক একটু গাঢ় হতে না হতেই সটান বিয়ের প্রস্তাব দিত আবদুল্লা। ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব আজ, ভাল করে সেজে এসো’ মিষ্টি মুখ করে বলত সে। আহ্লাদে ডগোমগো প্রেমিকা গয়নাগাঁটি পরে হাজির হলে তাঁকে নির্জনে নিয়ে গিয়ে প্রেমিকপ্রবর লুঠেরা। গয়না-টাকাকড়ি কেড়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাওয়া।
তরুণী পুলিশে জানালে কী হবে? নাম-ধাম সবই তো ভুয়ো। কখনও আবার ব্যবসায় মার খাওয়ার গল্প শুনিয়ে ছলোছলো চোখে সাহায্য চাইত সে। তাতেও গলে গিয়ে পঞ্চাশ হাজার-এক লাখ জোগাড় করে দিতেন সব দিতে রাজি প্রেমিকা। তার পরেই হবু বর বেপাত্তা।
এভাবেই চলছিল বেশ। কিন্তু ‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।’ ইদানীং বসিরহাটে কাছারিপাড়ার এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়েছিল আবদুল্লা। বিয়েও ঠিক হয়ে যায়! তার পরে যথারীতি প্রেমিকার থেকে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে বসে সে। দামি গাড়ি, দামি পোশাক ছাড়া যার চলে না তার হঠাত্ ভোলবদলে সন্দেহ হয় ওই তরুণীর। কোনও গোলমাল আছে আঁচ করে চলে যান থানায়।
পুলিশ এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। ঠগের সন্ধান পেতে তরুণীকে গয়নাগাঁটি পরে, নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলা হয় ভ্যাবলা স্টেশনে। খোশমেজাজে টাকা নিতে এসে সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আবদুল্লা। বসিরহাট আদালত আপাতত তাকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
শ্রীঘরে গিয়েও অবশ্য স্বভাব যায়নি আবদুল্লার। বরং পুলিশকে সে বলেছে, কুসঙ্গে পড়েই সে বিগড়ে গিয়েছে। বন্ধুদের প্ররোচনাতেই তার এই লুঠেরা প্রেম। এমনকী তার বাড়ির লোকজনও সেটাই বিশ্বাস করছেন। বসিরহাট থানার আইসি শুভাশিস বণিক মুচকি হেসে বলেন, “জেরা তো চলছে। বন্ধুরাও ধরা পড়বে। দেখা যাক, কে কাকে বিগড়ে দিয়েছে!”
প্রেমিক গারদে। ফের পাতি চোর আর মাছের ভেড়ি শাসন করায় মন দিয়েছে পুলিশ। |