শনিবারের ফিরোজ শাহ কোটলায় যা হল, অনেকের কাছেই সেটা আজব ঠেকতে পারে। রাজস্থান বনাম দিল্লি। আর দু’দলে রয়েছে রাহানে, ব্র্যাড হজ, ওয়ার্নার, জয়বর্ধনের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কাঁপানো সব নাম। আর ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার হয়ে গেল কে? না, এক জন রাহুল দ্রাবিড়!
আমার কাছে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই আজব লাগছে না। কারণ আমি যে রাহুলকে খুব ভাল করে চিনি। জানি, এই লোকটা কমিটমেন্টকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। সবাই দেখল, তিন নম্বরে নেমে কোটলার মতো স্লো উইকেটে ৫১ বলে ৬৫ করে গেল রাহুল। ছ’টা চার, দুটো ছয়ও মেরে দিল। কিন্তু জানল না, কোন রসায়নে এই বয়সেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এ রকম ইনিংস খেলা যায়?
আসলে রাহুলের এই ইনিংসের প্রস্তুতি কিন্তু অনেক দিন ধরেই শুরু হয়েছিল। যখন ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে কমেন্ট্রি পর্যন্ত করেনি ও। কারণ কী ছিল? না, আইপিএলের জন্য ট্রেনিং করতে হবে। ট্রেনিংটা যে ঠিকঠাক হয়েছে, তা ওকে এ দিন দেখে বুঝলাম। ৩-৪ কেজি ওজন কমিয়েছে। রাহুলের ট্রেনিং প্রসেসটা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাও জানেন, ব্যাটিংয়ের মতো ওর ট্রেনিংটাও কতটা মেথডিকাল। ওর নোটবুকে লেখা থাকে, আজ ৩০ মিনিট ট্রেডমিল করব। ২০ মিনিট ওয়েট ট্রেনিং করব। ৪ লিটার জল খাব। এবং শুধু লেখা থাকাই নয়, সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনেও চলে। আসলে প্রস্তুতিতে কোনও রকম ফাঁক রাখেনি রাহুল। যার ফলটা এখন পাচ্ছে। |
১০ বলে ৬ |
৫১ বলে ৬৫ |
১ বলে ০ |
|
আগের আইপিএলে ইনিংস ওপেন করেছিল রাহুল। এ বার শ্রীলঙ্কার পেরিরাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য তিন নম্বরে নেমে এসেছে। প্রথম ছ’ওভারের সুযোগটা ও এ দিন খুব বেশি নিতে পারেনি। তাই দ্রুত রান তোলার কাজটা কিন্তু ওর কাছে বেশ কঠিন ছিল। রাহুল কিন্তু একই সঙ্গে দুটো কাজ করে দিল। স্ট্রাইক রোটেট করল আর বড় শট খেলল। এ রকম ব্যাটিং শুধু ক্লাস ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেই পাওয়া যায়। টি-টোয়েন্টির মার্কামারা ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে নয়। শেন ওয়ার্নের জায়গায় রাজস্থান রয়্যালসকে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাহুল। ওয়ার্নের মতোই ও সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে চায়। আইপিএল সিক্সের প্রথম ম্যাচেই দলের জয়ের পিছনে কিন্তু বড় অবদান থেকে গেল অধিনায়কের।
এ দিন আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখা গেল। একই দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন গ্রেট ব্যাটসম্যানকে টি-টোয়েন্টিতে খেলতে দেখলাম। এবং প্রথম দিনের স্কোরকার্ডে কিন্তু রাহুল দু’গোল দিয়ে দিয়েছে সচিন আর পন্টিংকে। মুম্বই ইনিংসে সচিন-পন্টিং ওপেন করছে। এবং দু’জনের কাউকেই আদৌ সচ্ছ্বন্দ দেখাচ্ছে না। পন্টিং বা সচিন যেন নিজেদের ভূমিকাটাই বুঝতে পারছে না। কে মারবে, কে ধরবে ঠিক করতে করতেই ছ’ওভার চলে যাচ্ছে। রান উঠছে না। এ দিন আবার সচিন প্রথম বলেই আউট। আর পন্টিং করল ১০ বলে ৬। আর আউট হল কি না পুল শট মারতে গিয়ে! পন্টিং বিগ ব্যাশে যে ফর্মেই থাকুক না কেন, ভারতীয় পিচের সঙ্গে একদমই মানিয়ে নিতে পারছে না। অধিনায়কের খারাপ ফর্ম সত্ত্বেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যে এ দিন ধোনির চেন্নাইকে হারাতে পারল, তার পিছনে একটাই নাম। কায়রন পোলার্ড। ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৭ করল। একটা উইকেট নিল। আর শেষ ওভারে ধোনির একটা অসাধারণ ক্যাচ। কিন্তু পন্টিং ফর্মে না এলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের চিন্তা যাবে না।
|
|
‘এতটা সময় ব্যাট করতে পারব, নিজেই ভাবিনি’
চেতন নারুলা • নয়াদিল্লি |
নিজের ইনিংস নিয়ে রাজস্থান অধিনায়ক বলছিলেন, “অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এতক্ষণ ব্যাট করতে পারব ভাবিনি। শেষ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছি গত বার আইপিএলে। আজ ব্যাট করতে নামার সময় একটু চাপে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত সব কিছু আমাদের পক্ষেই গিয়েছে।” দ্রাবিড় মনে করছেন, দু’ দলের ফিল্ডিংই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। “রাহানের ক্যাচটা দুর্দান্ত। ওয়ার্নারকে যে ভাবে হজ রান আউট করল, ওটাও অসাধারণ। ওরাই ম্যাচটার রং বদলে দিয়েছে,” বলছেন রাজস্থান অধিনায়ক। |