এ যেন এক অন্য সচিন!
নামটা যখন সচিন তেন্ডুলকর, তখন তাঁকে ঘিরে যে সব ম্যাচেই আকর্ষণের একটা আলাদা বলয় তৈরি হয়ে যাবে, তা কারও অজানা নেই। তবে আজ পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয়েছে সচিনের ক্রিকেটীয় মহাকীর্তি নিয়ে। তাঁর একের পর এক মাইলফলক স্থাপন করা নিয়ে। ক্রিকেট বিশ্বের এক শৃঙ্গ থেকে আর এক শৃঙ্গে উত্থান নিয়ে।
শনিবারের সন্ধেটা কিন্তু ব্যতিক্রম হয়ে থাকল। শনিবার মানে পেপসি আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, বা আরও ভাল করে বলতে গেলে ধোনি বনাম সচিন মহাযুদ্ধ। আর এই ক্রিকেটীয় মহারণে ব্যাট হাতে যিনি মুম্বইয়ের নীল জার্সি গায়ে ওপেন করতে নামলেন, তাঁকে নিয়ে তোলপাড় ক্রিকেট দুনিয়া। কারণ প্রথম বলেই বিতর্কিত এলবিডব্লিউ হয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সচিন।
যা নিয়ে কলকাতা ময়দান থেকে সোশাল নেটওয়ার্কিং ঝড় উঠেছে সব জায়গাতেই। দুই বাঙালি আম্পায়ার সুব্রত পোড়েল এবং সত্রাজিৎ লাহিড়ী দ্বিমত, সচিন আউট ছিলেন কি না, তা নিয়ে। ফেসবুক, টুইটারের প্রতিক্রিয়া এ কোন সচিনকে দেখলাম। |
প্রথম ম্যাচের মতো এ দিনও চিপকে রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন সচিন। চেন্নাইয়ের বোলিং আক্রমণ শুরু করলেন ডার্ক ন্যানেস। পঞ্চম বলে স্ট্রাইক নিতে এলেন সচিন। বাঁ-হাতি পেসার ন্যানেসের অনলেংথ বলটা ছিল লেগস্টাম্পে পিচ করা। যা আড়াআড়ি খেলতে গেলেন সচিন। এর পরই ন্যানেসের টানা, জোরদার আবেদন আম্পায়ার বিনীত কুলকার্নির কাছে। আম্পায়ারের আঙুল উঠতে না উঠতেই সেই অভাবনীয় দৃশ্য মাঠের মধ্যেই আম্পায়ারের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত ভাবে কিছু বলতে দেখা গেল সচিন তেন্ডুলকরকে!
এর পরেও টুইটার-ফেসবুক চুপ থাকতে পারে? সচিন আউট ছিলেন কি না, ন্যানেসের বল আদৌ লেগস্টাম্পে আছড়ে পড়ত কি না, তা নিয়ে সরগরম আলোচনা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে যেন ছড়িয়ে পড়েছে অবাক বিস্ময়। উনি কি সত্যিই সচিন তেন্ডুলকর? ক্রিকেটের ঈশ্বরকে শেষ কবে এত উত্তেজিত দেখা গিয়েছে? অনুভূতিটা হয়তো ধরা যাবে জনৈক সচিন-ভক্তের কাতর অভিব্যক্তিতে, ‘এটা তেন্ডুলকর ছিল না। ওই শট সিলেকশন। আর তার পর আউট হয়ে ও রকম প্রতিক্রিয়া কোনও দিন এই জিনিস দেখতে হবে ভাবিনি!’
ময়দানের আম্পায়ারিং মহলও এ দিন সচিন প্রসঙ্গে দ্বিধাবিভক্ত। সিএবি-র অন্যতম অভিজ্ঞ আম্পায়ার সুব্রত পোড়েল যেমন বলছেন, “ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি নির্ভর করে থাকে আম্পায়ারের উপর।” তাঁর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে আছে যে ব্যাটসম্যানের ভাগ্য, তার নাম সচিন তেন্ডুলকর হলে কি আম্পায়ারের উপর বাড়তি চাপ থাকে? “না, না। আম্পায়ারিং করার সময় ও সব মাথায় থাকে না,” বলছেন সুব্রতবাবু। আউট নিয়ে দ্বিধায় থাকল আম্পায়ারকে গালি দেওয়ার ব্যাপারে যে সচিনের ফাইন হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিঃসন্দেহ তিনি।
বাংলা থেকে রঞ্জি প্যানেলে থাকা আর এক অভিজ্ঞ আম্পায়ার সত্রাজিৎ লাহিড়ীর কাছে অবশ্য ফিফটি-ফিফটির কোনও গল্পই নেই। কেন? “ওটা কোনও ভাবেই আউট ছিল না। ভুল সিদ্ধান্ত। বলটা তো লেগস্টাম্পের বাইরে পিচ করছিল। লেগস্টাম্পের বাইরে যেত।” একই সঙ্গে আবার সত্রাজিতের গলায় অপার বিস্ময় সচিনের অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে। “ওকে কোনও দিন এ ভাবে রিঅ্যাক্ট করতে দেখিনি। মনে হয় সচিন ভেবেছিল আজ রান পাবে। সেটা না হওয়ার প্রচণ্ড হতাশা আর বিরক্তি ওর মধ্যে কাজ করছিল,” ব্যাখ্যা তাঁর।
|
সচিনের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে আইপিএল শুধু বিনোদনমূলক নয়। সচিন ভীষণ ভাবে একটা বড় রান চেয়েছিল। পাশাপাশি জানিয়ে রাখি, যত বার সচিন শূন্য রানে আউট হয়েছে, আইপিএলে মুম্বই জিতেছে।
ডিন জোন্স |
বিশ্বাস হচ্ছে না সচিন প্রথম বলেই আউট!
ব্রেট লি |
|