ইস্টবেঙ্গলের অশ্বমেধের ঘোড়ার চালক এ বার লাগাম টানতে চলেছেন?
লাল-হলুদে যাঁর নাকি এত সাফল্য, সেই ট্রেভর মর্গ্যান হঠাৎ করে ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসলে প্রথমেই মনে আসে, ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান ক্লাব-কর্তাদের অপেশাদার মানসিকতার কথা। একই কোচ ধরে রাখার মতো মানসিকতাই নেই ওঁদের। ব্যর্থতার যাবতীয় দায় কোচেদের ঘাড়ে চাপানোটা দুই প্রধানের কর্তাদের স্বভাব। নিশ্চয়ই মর্গ্যানের সঙ্গেও এমন কিছু ঘটেছে, যে জন্য তিনি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে চাইছেন!
তবে, মর্গ্যান যদি ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে চলেও যান, এতে বাংলার ফুটবলের লাভ-ক্ষতি কিছুই হবে না। যে কোচ গত তিন বছর ধরে আই লিগ এনে দিতে পারেননি (এই মরসুমেও আই লিগ পাওয়ার সম্ভবনা প্রায় নেই ইস্টবেঙ্গলের) তাঁর সাফল্যের পরিসংখ্যান করতে বসাটাও তো বোকামি। অনেক বাঙালি কোচ রয়েছেন, বাংলার ফুটবলে যাঁদের সাফল্য মর্গ্যানের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। পিকে বন্দোপাধ্যায়, সুভাষ ভৌমিকদের কথা ভুললে চলবে না। সুভাষদা তো ইস্টবেঙ্গলকে আসিয়ান কাপের মতো সাফল্য এনে দিয়েছেন। আর মর্গ্যান সবে দু’টো এএফসি কাপের ম্যাচ জিতেছে। তাতে এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কি কোনও কারণ আছে?
আই লিগ আর ফেড কাপের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করতে বসলেও দেখা যাবে, ভারতীয় কোচেরা বিদেশিদের তুলনায় একশো শতাংশ এগিয়ে আছেন। সুভাষ ভৌমিক, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যও ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ দিয়েছেন। ক্লাব কর্তারা কি সেটা মনে রেখেছেন? আসলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বিদেশিদের প্রতি আনুগত্য কমল না আমাদের।
সবাই বলছে, এ বছর ইস্টবেঙ্গল কলকাতা লিগ জিতলে হ্যাটট্রিক করবেন মর্গ্যান। আরে, এখন তো ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানের বাইরে কেউ কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়নই হয় না। ছোট দলগুলোর মধ্যে আগের সেই জোশটাই নেই। এই সাফল্য দিয়ে কি ভাল-মন্দের বিচার করা যায়? তবু বিদেশি বলেই হয়তো আমরা এত লাফালাফি করি। সত্যি কথা বলতে, মর্গ্যান এত বড় মাপেরও কোচ নন যে তিনি চলে গেলে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে ইস্টবেঙ্গলের মতো দলকে। ভিলানোভা কোচ হওয়ার পরও কি বার্সিলোনা সাফল্য পাচ্ছে না?
তবে শেষ করার আগে আবারও বলব, যত দিন না বাংলার ক্লাব কর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে তত দিন বাংলার ফুটবলের সাফল্য আশা করাটাই ভুল। একই দল আর একই কোচ ধরে রাখতে না পারলে ডেম্পোর মতো সাফল্য আসবে না। আর্মান্দো কোলাসো বিদেশি নন। তবু তিনি সফল। তার বড় কারণ বোধহয়, কোলাসো বহু দিন ধরে ডেম্পোর কোচের দায়িত্বে রয়েছেন। |