আপাত শান্ত ময়দানে হঠাৎ বিস্ফোরণ। আর বোমাটা ফাটালেন স্বয়ং ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। ইস্টবেঙ্গলের সাহেব কোচ শনিবাসরীয় সকালে হঠাৎ করে সাংবাদিকদের বলে বসলেন, “আমি আর ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকতে চাই না।”
যা নিয়ে আপাতত তুলকালাম ময়দানে। এক দিকে ক্লাব কর্তারা বলছেন, “আমাদের কাছে মর্গ্যান সরকারি ভাবে কিছু বলেননি।” অন্য দিকে মর্গ্যানের সাফ কথা, ক্লাবকে বলার পরেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলেছেন।
মর্গ্যানের ঘনিষ্ট মহলের বক্তব্য হল, সাহেব কোচ অত্যন্ত ‘প্রোটোকল’ মেনে চলা লোক। রীতি বিরুদ্ধ কাজ করাটা তাঁর ধাতে নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি কোচই ঠিক? তিনি কি ইতিমধ্যেই তাঁর সিদ্ধান্তের কথা ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছেন?
ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার কারণ হিসাবে মর্গ্যান বলছেন, “অনেক দিন বাড়ির বাইরে। পরিবারকে খুব মিস করছি। পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যই ইস্টবেঙ্গলে কোচিং দায়িত্ব ছাড়তে চাই।”
সকালে ক্লাব কর্তারা তাঁবুতে না থাকায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য তাঁরা আসরে নেমে পড়েন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেছেন, “সরকারি ভাবে কোচ আমাদের এখনও কিছু জানায়নি। গত বারও তো ছাড়ব বলেছিল। ছেড়েছেন কি?” লাল-হলুদের আর এক শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার আবার বলে দিলেন, “আগে এই মরসুম শেষ হোক, তারপর আমরা কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসব। যদি ওর যুক্তিগুলো গ্রহণযোগ্য মনে হয়ে তবেই আমরা ভেবে দেখব মর্গ্যানকে ছাড়া যাবে কি না!”
কোচের সঙ্গে ২০১৪-র মার্চ পর্যন্ত সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু মর্গ্যান তাতে ঘাবড়াচ্ছেন না। বরং যুক্তি দেখাচ্ছেন, “চুক্তি আছে ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি চুক্তি ভাঙার জন্য বেশ কিছু ধারার উল্লেখও রয়েছে চুক্তিপত্রে। সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
কোচের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুটবলাররা মুখ না খুললেও ঘনিষ্ট মহলে বলেছেন, মর্গ্যান চলে গেলে দলের ক্ষতিই হবে। কারণ এ রকম পেশাদারিত্ব সব কোচের মধ্যে দেখা যায় না। ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যের পিছনে কোচের বড় ভূমিকার কথাও অনেকে বলেছেন। তিন বছরের কোচিং জীবনে দু’বার ফেডারেশন কাপ, জুবিলি কাপ, সুপার কাপ, দু’বার ক্লাবকে আই লিগে রানার্স করিয়েছেন মর্গ্যান।
মর্গ্যান সরকারি ভাবে পরিবারের কথা বললেও শোনা যাচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার কোনও ক্লাবের সঙ্গে তাঁর অনেকদূর কথাবার্তা এগিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল শিবিরের খবর, ৯ এপ্রিল ট্যাম্পাইন রোভার্সের বিরুদ্ধে এএফসি কাপের ম্যাচের পরই নাকি কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কর্তারা।
শেষ পর্যন্ত যদি কোচকে আটকাতে মাঠে নেমে পড়েন লাল-হলুদ কর্তারা, মাঠের বাইরেও একটা ‘হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ’ দেখতে পারে ময়দান।
|
মর্গ্যান জমানায় লাল-হলুদ |
২০১০-১১ |
চ্যাম্পিয়ন-ফেড কাপ, কলকাতা লিগ, জুবিলি কাপ, রানার্স-আই লিগ |
২০১১-১২ |
চ্যাম্পিয়ন-আইএফএ শিল্ড, কলকাতা লিগ, সুপার কাপ, রানার্স-আই লিগ, ফেড কাপ |
২০১২-১৩ |
চ্যাম্পিয়ন-ফেড কাপ, রানার্স-আইএফএ শিল্ড (আই লিগ, কলকাতা লিগ এখনও শেষ হয়নি) |
|