বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত হাবরা-১ ব্লকের মছলন্দপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থ বসুর বিরুদ্ধে। ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য সিপিএমের স্বপ্না ঘোষ বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে জানান, প্রধান কাজ না হওয়া প্রকল্পের অর্থ পঞ্চায়েত অফিস থেকে ঠিকাদার সংস্থার নামে তুলে নিয়েছেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পার্থবাবু। প্রাথমিক তদন্তের পরে ব্লক প্রশাসন অবশ্য মনে করছে, অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।
স্বপ্নাদেবীর অভিযোগ, “চারটি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। কোনও কাজই হয়নি। অথচ, প্রধান পঞ্চায়েতের নথিতে সব কাজ হয়ে গিয়েছে বলে দেখিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েত এলাকায় ১৯টি নলকূপ লাগানো হয়েছে বলে পঞ্চায়েতের নথিতে দেখানো হয়েছে এবং প্রতিটি নলকূপপিছু ঠিকাদারকে ৩৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নামমাত্র কাজ হয়েছে। এ ছাড়া, ১০টি নলকূপের চাতাল পাকা এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক লাগানো হয়েছে দেখানো হয়েছে। এ জন্য চাতালপিছু ১৯ হাজার টাকা করে তোলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নামমাত্র কাজ হয়েছে। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত এলাকায় ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের সাত লক্ষ টাকা খরচ করে রাস্তায় আলো লাগানো হয়েছে দেখানো হলেও পঞ্চায়েত এলাকায় মাত্র কয়েকটি আলো বেআইনি ভাবে লাগানো হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি। ভুয়ো বিল জমা দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবারই হাবরা-১ ব্লকের বিডিও চিত্রদীপ সেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন এবং জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের কাছে ওই অভিযোগ দায়ের করেন স্বপ্নাদেবী। প্রধানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শুক্রবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে সিপিএমের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারই ব্লক প্রশাসনের তরফে এলাকায় গিয়ে অভিযোগের তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
পার্থবাবু অবশ্য স্বীকার করেছেন ঠিকাদার সংস্থাকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে তিনি বলেন, “৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ না হলে বরাদ্দ অর্থ ফেরত চলে যেত। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ছোট্ট একটা ভুল করেছি। তবে, প্রকল্পগুলির কাজ ইতিমধ্যেই ৬০-৭০ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে।” বিডিও বলেন, “অভিযোগগুলির তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে অভিযোগগুলি ঠিক। তবে, আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঠিকাদারকে অগ্রিম টাকা দেওয়ার কথা প্রধান লিখিত ভাবে স্বীকার করেছেন।”
হাবরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জাকির হোসেনও বলেন, “এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে প্রধানের উদ্দেশ্য সৎ। কিন্তু কাজটা তিনি আইন মেনে করেননি।” |