|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
সদর হাসপাতাল |
‘কল্যাণে’ অকল্যাণ |
সত্যজিৎ চক্রবর্তী |
বরাদ্দ ছিল চারটি ঘর, ভাগে জুটছে দু’টি। তাই বারাসত সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর আত্মীয়দের থাকতে হচ্ছে হাসপাতাল চত্বরেই। অভিযোগ, রোগীর পরিজনেদের জন্য তৈরি বিশ্রামাগারের চারটি ঘরের মধ্যে দু’টি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্যান্টিন ও কনফারেন্স হল হিসাবে। বাকি দু’টি ঘরে অল্পসংখ্যক মানুষের ঠাঁই হচ্ছে কোনওক্রমে। আরও অভিযোগ, রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিশ্রামাগারে যে টেলিফোনটি ছিল সেটিও রোগীকল্যাণ কমিটির ‘কল্যাণে’ রোগীর আত্মীয়দের হাতছাড়া। এখন রাতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কিংবা কোনও দরকারে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ডাক্তার ও নার্সদের। |
|
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বাম আমলে রোগীর পরিজনেদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় একটি দ্বিতল ভবনে। একতলার দু’টি ঘর মহিলাদের এবং দোতলার দু’টি ঘর বরাদ্দ হয় পুরুষদের জন্য। বেশি রাতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বা অন্য কোনও দরকার হলে ওয়ার্ড থেকে নার্স ফোনে তাঁদের খবর দিতেন। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে জেলাশাসক, পুর চেয়ারম্যান এবং হাসপাতালের কয়েক জন আধিকারিক-সহ আরও অনেককে নিয়ে গড়া হয় রোগীকল্যাণ কমিটি। স্থির হয় কমিটি রোগীকল্যাণের জন্য সরকারি অর্থে হাসপাতালের মানোন্নয়নের নানাবিধ পরামর্শ ছাড়াও নানা সমস্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে জানাবে।
কিন্তু অভিযোগ, রোগীকল্যাণ কমিটি রোগীর পরিজনেদের সমস্যা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। টেলিফোনটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে ক্যান্টিনে। যাতে চিকিৎসকেরা ফোনেই খাবারের অর্ডার দিতে পারেন। বহু অনুরোধ জানিয়ে এবং রোগীকল্যাণ কমিটিতে চিঠি পাঠিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ বিশ্রামাগার কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতালের বিশ্রামাগারের কর্মী সুনীতি পাল বলেন, “প্রতি দিন বহু রোগীর পরিজনেরা জায়গা না পেয়ে ফিরে যান। অনেকে জায়গা না পেয়ে ঝামেলা করেন। আগে চারটি ঘরে ১০০ জন থাকতে পারতেন। এখন দু’টি ঘরে ৫০ জনকে রাতে থাকার জায়গা দিতে পারি। রাতে ডেকে দেওয়ার টেলিফোনটিও পাশের ক্যান্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীকল্যাণ কমিটিকে বিষয়টি জানিয়ে তার যোগাযোগের ব্যবস্থা করার আবেদন করেছি।” |
|
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের ভিতরের নিরাপত্তা নিয়েও। হাসপাতালের মধ্যে একটি ঘর বরাদ্দ হয়েছে পুলিশের থাকার জন্য। তা সত্ত্বেও, অভিযোগ, সেখানে রাতে নানা সমাজবিরোধী কাজ ও নেশাড়ুদের দৌরাত্ম্য চলে। যাঁরা রাতে হাসপাতালে থাকেন, জল বা পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে তাঁদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুঠের ঘটনাও ঘটেছে। থানা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেও ধরা পড়েনি কেউ। হাসপাতালে মামার সঙ্গে রাত কাটাচ্ছিলেন বনগাঁর বাসিন্দা রানা সরকার। মাদকের তীব্রতার শিকার হয়ে পরের দিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁদের দু’জনকেই। খোয়া যায় সর্বস্বও। রানার কথায়, “পুলিশে অভিযোগ করেছি কিন্তু কিছুই উদ্ধার হয়নি।” উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “হাসপাতালের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার জন্য বারাসত থানার পুলিশকে এ বিষয়ে ভাল ভাবে খোঁজখবর নিতে বলব। প্রয়োজনে ওখানে আরও পুলিশ মোতায়েন করতে বলব।” |
|
হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “বিশ্রামাগারের সঙ্গে ওয়ার্ডগুলির তার সংযোগ বা টেলিফোনে যোগাযোগ নেই এটা ঠিক। তবে শীঘ্রই টেলিফোন সংযোগ করা হবে। বিশ্রামাগার থাকা সত্ত্বেও রাতে সেখানে না থেকে অনেকে হাসপাতাল চত্বরেই থাকেন। তাই পরিসংখ্যান দেখে রোগীকল্যাণ কমিটির সিদ্ধান্তে ক্যান্টিন ও কনফারেন্স হল করা হয়েছে।” রোগীকল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বিশ্রামাগারের সঙ্গে তার বা টেলিফোনে সংযোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব। এ ছাড়াও সাত লক্ষ টাকা ব্যয় করে রোগীর পরিজনেদের জন্য আরও দু’টি ঘর এবং হাসপাতাল চত্বরে তাঁদের বসার জায়গায় নতুন ছাউনি তৈরি করা হবে।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|