শ্যুটিংয়ের সময়েই স্টুডিওয় বড় আগুন
ঠাৎ বিকট শব্দ! এবং তার পরেই ‘আগুন আগুন’ চিৎকারে যে যে দিক দিয়ে পারেন, বেরোতে মরিয়া হয়ে উঠলেন।
শুক্রবার দুপুরে রিজেন্ট পার্কের দাসানি স্টুডিওয় একটি টিভি শো-র শ্যুটিং চলাকালীন এই দৃশ্য দেখা গেল। শহরের আদ্যিকালের ভাঙাচোরা বাড়ি, ঘিঞ্জি বাজারের মতোই টিভি-বিনোদনের ঝকঝকে সেট-ও যে আদতে জতুগৃহ, এই ঘটনায় তা ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন গিয়ে দেড় ঘণ্টায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। তীব্র আতঙ্ক ও ধোঁয়ায় ততক্ষণে দমকলের এক কর্মী-সহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের কথায়, “স্টুডিওয় আগুন নেভানোর ছিটেফোঁটা ব্যবস্থা ছিল না। স্টুডিও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।” শর্ট সার্কিটের ফলেই আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। টালিগঞ্জপাড়ার স্টুডিওগুলিতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থায় খামতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দুপুরে বেঙ্গালুরুতে থাকার সময়েই আগুন লাগার খবর পান তিনি। রাজ্যের যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। এর পরেই ঘটনাস্থলে অরূপ বলেন, “টেলি অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে বৈঠক ডেকেছি। আগেও অনেক বার বৈঠক করা হয়েছে। বারবার বলেছি, মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করবেন না। আগুন নেভাতে ন্যূনতম ব্যবস্থা বা জলের জোগান স্টুডিওয় থাকা উচিত। না হলে সরকার কঠোর হবে।”
ভস্মীভূত সেই স্টুডিওয় দমকলকর্মীরা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
স্টুডিও কর্তৃপক্ষের তরফে সিইও অমিতাভ দাসানি অবশ্য আগুন নেভানোয় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এসি ফ্লোরের একটি আলোর বাল্ব ফেটেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে স্টুডিওটির যে ফায়ার লাইসেন্স নেই, তা তিনি অস্বীকার করতে পারেননি। যদিও তাঁর বক্তব্য, “স্টুডিওর নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটু আলাদা। হঠাৎ জলের ফোয়ারায় দামি সেট নষ্ট হতে পারে বলে স্প্রিংক্লার রাখা থাকে না। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র বেশ কয়েকটা ছিল। সেগুলি কাজেও লেগেছে।” স্টুডিওটিতে একটি জলাধারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল বলে অমিতাভবাবুর দাবি। তবে ওই জলাধারের জল ব্যবহারের দরকার পড়েনি।
রিজেন্ট পার্কের ওই স্টুডিওয় বহু বছর আগে ফিল্মের শ্যুটিং হতো বলে টালিগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর। মাঝে দীর্ঘদিন দাসানিদের জেনারেটর তৈরির কারখানা ছিল ওই চত্বরে। বছর সাতেক আগে দাসানিরা স্টুডিওটি গড়ে তোলেন। বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বেশ কিছু কাহিনি-ভিত্তিক সিরিয়াল ও গেম শো-এর নিয়মিত শ্যুটিং চলে এখানে। এ দিন দুপুরেও বিন্নি ধানের খই, মা, ইস্টিকুটুম, ভালবাসা ডটকমের মতো সিরিয়ালের শ্যুটিং চলছিল সেখানে। বিপত্তির সূত্রপাত অবশ্য ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর সেটে। ওই গেম শো-র পয়লা বৈশাখ স্পেশাল এপিসোডের শ্যুটিং তখন শেষ পর্যায়ে। দুপুর পৌনে একটা নাগাদ নতুন একটি রাউন্ড (প্রশ্নোত্তর-পর্ব) শুরুর আগের মুহূর্তে এসি ফ্লোরে সকলেই টান-টান দাঁড়িয়ে। সেটের আলো জ্বলতেই মাথার উপরে আগুনের ফুলকি দেখে কেউ কেউ ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন। শ্যুটিংয়ের কন্ট্রোল রুম (পিসিআর) থেকে মুহূর্তে জেনারেটর নিভিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেই ভয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়।
গেম শো-র অতিথি কেয়া শেঠের কথায়, “ফ্লোরের ঘাঁতঘোত ভাল ভাবে না-চেনার ফলে আমরা একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম।” ফ্লোরের মেক-আপরুমের পাশে তস্য গলির মতো একটা দালান। সেই দালানের দিকের দরজা ঠেলে বেরোতেই এক সঙ্গে অনেকে মরিয়া হয়ে পড়েন। প্রথমটা দরজা খুলতে না-পারায় আরও আতঙ্ক বাড়ে। ফ্লোরে উপস্থিত লোকজনেদের বক্তব্য, ওই সময়ে ফ্লোরের ছাদ থেকে ছোবড়া, চট ইত্যাদি মাথার উপরে পড়ছে। আগুনের হল্কা ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। কেয়ার কথায়, “বেরোতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন কয়েক জন। প্রাণে বাঁচতে তাঁদের ডিঙিয়েই কেউ কেউ বেরোতে চেষ্টা করছিলেন।” মিনিট পাঁচ-সাতের মধ্যেই দরজা খোলে। শো-এর আর এক অতিথি স্বর্ণালী কাঞ্জিলালের কথায়, “ওইটুকু সময়েই মৃত্যুভয় কাকে বলে তা ভালমতো টের পেয়েছি।” গনগনে আঁচে কেয়া, স্বর্ণালীর মতো অনেকেরই শাড়িতে আগুন ধরে গা-হাত পা একটু-আধটু ঝলসে গিয়েছে। কেয়া বলছিলেন, তাঁর মাথার চুলও পুড়ে গিয়েছে।
কিন্তু এ সব চোট-আঘাত ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে আতঙ্ক। আগুন নেভার কিছুক্ষণ বাদে স্টুডিও-চত্বরে পৌঁছে দেখা যায়, আতঙ্কে সংজ্ঞা হারিয়েছেন সঞ্চালক রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের কলাকুশলীদের শুশ্রূষায় তিনি অবশ্য কিছু ক্ষণের মধ্যে সম্বিত ফিরে পান। তবে স্টুডিওয় ঢোকার বা বেরোনোর পথ ভাল ভাবে খেয়াল না-করে এ ভাবে শ্যুটিং করার বিপদের দিকটা এ দিন কলাকুশলীরা অনেকেই মেনে নিয়েছেন।
দাসানি স্টুডিওর এই অবস্থা অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সম্প্রতি প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ভারতলক্ষ্মী স্টুডিও-তেও আগুন লেগেছিল। দমকল সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেশির ভাগ স্টুডিও-র আগুন নেভানোর ব্যবস্থাই ঠিকঠাক নয় বলে অভিযোগ। অমিতাভবাবুর অবশ্য দাবি, স্টুডিওর তেমন ক্ষতি হয়নি। তাঁর আশা, প্রশাসন সহযোগিতা করলে স্টুডিওয় দ্রুত শ্যুটিং শুরু করা হবে। হঠাৎ আগুনের বিপদে বেশ কয়েকটি চালু টিভি সিরিয়ালের নির্মাতাদের আপাতত মাথায় হাত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.