তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ছ’দিন ধরে বন্ধ কেতুগ্রামের উদ্ধারনপুর থেকে নদিয়ায় কালীগঞ্জের ভাগ্যবন্তপুর পর্যন্ত ফেরি চলাচল। মাঝে গত মঙ্গলবার প্রশাসনের উদ্যোগে এক দিন চালু হলেও ফের বাধায় বন্ধ হয়েছে নৌকা। শুক্রবার সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন কালীগঞ্জের বিডিও তনুশ্রী বটব্যাল। রাত পর্যন্ত বৈঠক চলে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরে ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্ব পায় তৃণমূল পরিচালিত সীতাহাটি পঞ্চায়েত। এই ছ’মাসের জন্য জেলা পরিষদকে তিন লক্ষ তিন হাজার টাকা ইজারা দেয় তারা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে নতুন দরপত্র ডাকে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ২৮ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হলে দেখা যায় বার্ষিক এক লক্ষ ১৩ হাজার টাকায় ঘাটটির ইজারা পেয়েছেন সীতাহাটির নৈহাটি গ্রামের তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই এলাকায় তৃণমূলের একাংশের গড়া ‘খেয়াঘাট বাঁচাও কমিটি’ বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাক ক্ষতিতে কী ভাবে তাপসবাবুকে ওই ইজারা দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তোলে। কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্যামল মুখোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করেন। সোমবার তাপসবাবু ফেরি চলাচলের দায়িত্ব নিতে গেলে ঘাটে তৃণমূলের পতাকা বেঁধে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেন কয়েক জন। কালীগঞ্জেও তৃণমূল কর্মীরা নৌকা চালাতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। এর পরে ইজারাদার তাপসবাবু বিডিও-কে লিখিত ভাবে জানান, তিনি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারছেন না। এই দায়িত্ব দেওয়া হোক ‘ফেরিঘাট বাঁচাও কমিটি’কে। জেলা প্রশাসন যদিও সাফ জানায়, ইজারাদারকেই ফেরি চালাতে হবে।
কেতুগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের অভিযোগ, “কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে নৌকা চালাতে বাধা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আদালতে মামলা করেছে। আমরা চাই, ইজারাদারকেই ফেরির দায়িত্ব দেওয়া হোক। আদালত যা বলবে সেই অনুযায়ী কাজ হবে।” আদালতে জনস্বার্থ মামলাকারী স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্যামলবাবু এ দিন বলেন, “সীতাহাটি পঞ্চায়েত ফেরিঘাট পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায়। ইজারাদারও তা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। কিছু মানুষ তাতে বাধা দিচ্ছেন।” কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য হাফিজুদ্দিন আহমেদ কাটোয়ার ফেরি চালানোর জন্য মহকুমাশাসক ও প্রশাসনের নানা জায়গায় আবেদন করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “নদিয়া জেলার মানুষ রোগী, জিনিসপত্র নিয়ে কাটোয়া যেতে পারছেন না। তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।” কালীগঞ্জ ব্লক তৃণমূল নেতা জগন্নাথ সাহা বলেন, “নৌ চলাচলে বাধা দেওয়ার সময়ে আমাদের দু’এক জন ছিলেন। বৈঠকে ফেরি চালুর আবেদন রেখেছি।” বিডিও তনুশ্রী বটব্যাল বলেন, “আমরা বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করছি।” |