ডুয়ার্সে বন্ধ ঢেকলাপাড়া, রামঝোরা, বান্দাপানি, দলমোড়, মধু
বন্ধ বাগান খোলার দাবি চা শ্রমিকদের
জুরি নিয়ে বিরোধে বন্ধ হওয়া রামঝোরা চা বাগান দ্রুত খোলানোর দাবিতে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করল সব চা শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনগুলির আশঙ্কা, দ্রুত বাগান চালু করা না হলে ফের অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হতে পারে। শ্রমিক নেতারা জানান, একে অন্য বাগানের তুলনায় অল্প মজুরিতে শ্রমিকরা কাজ করেন, উপরন্তু বেশ কিছুদিন টাকাই পানননি। বহু বাড়িতে অর্ধাহারের ছবি দেখা যাচ্ছে। বাগান দ্রুত না-খুললে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। ইনটাকের চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লু নেতা মনি ডারনাল বলেছেন, “পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত বাগান খোলা জরুরি। অন্য বাগানের সম-হারে মজুরি দেওয়া মালিকের কর্তব্য। অবিলম্বে বাগান না খুললে মৃত্যু মিছিল শুরু হতে পারে।”
ওই আশঙ্কার কথা পৌঁছেছে শ্রম দফতরেও। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী মালিক পক্ষ শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরি কেন দিচ্ছিল না, সে বিষয়ে জেলা কর্তাদের আমি দেখতে বলেছিলাম। জটিলতা দূর করে দ্রুত বাগানটি চালুর জন্য আগামী সপ্তাহে বৈঠক ডাকার চেষ্টা করছি।” মালিকদের সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, “বাগানটির আর্থিক পরিস্থিতি ভেবে কিছু দিন মানিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। শ্রমিকরা টানা কাজ বন্ধ রাখায় বাগান বন্ধ করতে বাধ্য হন মালিক।”
বন্ধ রামঝোরা চা বাগান।—নিজস্ব চিত্র।
অন্য বাগানের মতো সমান হারে মজুরি দাবি করে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করেছে ওই অভিযোগ তুলে বুধবার বাগান ছেড়ে চলে যান কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে নিয়ে গত এক মাসে ডুয়ার্সে ৩টি চা বাগান বন্ধ হল। এ ছাড়াও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে পাঁচটি বাগান। সেগুলি চালু করার জন্য প্রশাসনের তরফে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হলেও মালিক পক্ষ অনুপস্থিত থাকায় তা ভেস্তে যাচ্ছে। জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “বাগানে মজুরি নিয়ে সমস্যা চলছিল। শ্রমিকরা কেন কাজ বন্ধ করল সেটা বুঝতে পারছি না। আলোচনায় বসে বাগান খোলাতে উদ্যোগী হব।”
৮ বছর বন্ধ থাকার পরে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে রামঝোরা বাগান চালু হয়। নতুন মালিক বাগান চালু করার সময়ে অন্য বাগানের মত শ্রমিকদের ৬৭ টাকা মজুরি দেওয়া হত। এক বছর পরে ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে নতুন মজুরি ঠিক হয় ৮৫ টাকা। ১ এপ্রিল থেকে সেটা বেড়ে ৯৫ টাকা হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, মজুরি চুক্তি রামঝোরা চা বাগানের কর্তৃপক্ষ মাছেন না। বাগানের মালিক নরেন্দ্র বারেলিয়া বলেন, “এই মুহূর্তে মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। তা শ্রমিকদের বলা হয়েছে। ওরা এক মাস ধরে পাতা তোলা বন্ধ করায় বাগান চালানো সম্ভব হয়নি।”
বাগানের তৃণমূল নেতা প্রহ্লাদ শর্মা দাবি করেন, কোনও শ্রমিক কাজ বন্ধ করেনি। কর্তৃপক্ষই পাতা তোলানোর কাজ বন্ধ রাখেন। নালা তৈরি সহ অন্য কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। রামঝোরা বাগান বাঁচাও কমিটির নেতা রমেশ শর্মা বলেন, “৬৭ টাকা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব। অনেকে আধপেটা খেয়ে আছে। মালিক পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের প্রত্যেককে কয়েক বার এই সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও রকম ফলই মেলেনি।”
এর আগে রামঝোরা বাগান বন্ধ থাকাকালীন ৮ বছরে অন্তত দেড়শো শ্রমিক অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির কথা শোনার পরে ২০০৫-এ বাগানে ছুটে যান তৎকালীন রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণ গাঁধী। শ্রমিকদের নিদারুণ কষ্ট দেখে তিনি তৎকালীন রাজ্য সরকারের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে অবশ্য রামঝোরা বাগানের পরিস্থিতির উন্নতি হয়। চা শ্রমিকদের অভিযোগ, বাগান চালু করার পরে মালিক পক্ষ সামান্য বেতন দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিন বছর আগে বাগান চালু হলেও সরকারি অন্ত্যোদয় যোজনা প্রকল্পের চাল, গম রেশন হিসাবে পাচ্ছেন। বাড়ি ঘর মেরামতের কাজ হয়নি। হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক ও ওষুধ না থাকায় গত ১৫ জানুয়ারি রাম মুণ্ডা নামে ৩৫ বছর বয়সী এক শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা যান বলে অভিযোগ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.