মেঘ জমল। কিন্তু আশা পূরণ হল না। বরং বৃহস্পতিবার সকালের দমকা হাওয়া আর বিক্ষিপ্ত ছিটেফোঁটা বৃষ্টি কালবৈশাখীর আশায় বেশি করে জল ঢেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা।
চৈত্রের শেষার্ধেও দেখা মিলছে না কালবৈশাখীর। মাঝেমধ্যে আকাশে মেঘ গর্জাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বর্ষানোর আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে তার তেজ। তাই এপ্রিলের তীব্র গরমেও অল্পবিস্তর ঝোড়ো হাওয়া আর ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে রাজ্যবাসীকে। যেমনটা মিলেছে এ দিন সকালে। আকাশ কালো করে দমকা হাওয়া শুরু হলেও তা গায়ে মাখার আগেই ফের কড়া রোদ।
কিন্তু দমকা কী ভাবে কাঁটা ছড়াল কালবৈশাখীর পথে? আবহবিদেরা জানান, সাধারণ ভাবে সকাল থেকে দিনভর প্রচণ্ড দহনই শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যায় কালবৈশাখীকে ডেকে নিয়ে আসে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া সাতসকালে হাজির হয়ে সেই সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে এ দিনের মতো। হাওয়া অফিস বলছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা থাকলেও সেটা তেমন শক্তিশালী নয়। তাই সে খুব বেশি পরিমাণে জলীয় বাষ্প টানতে পারছে না। মেঘধারণের ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে তার। এ দিনের ঝোড়ো হাওয়ার পিছনে সেই কারণই কাজ করেছে বলে আবহবিদদের একাংশ মনে করছেন। আবহাওয়া দফতরের খবর, উপকূলীয় ওড়িশায় ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। তাতে স্থানীয় ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তার প্রভাবেই এ দিন সকালে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় দমকা হাওয়া হয়েছে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু কালবৈশাখীর সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না কেন?
মৌসম ভবনের এক আবহবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পরিস্থিতির জন্যই দক্ষিণবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের একাংশে কালবৈশাখীর দেখা মিলছে না। তিনি বলেন, “ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় বায়ুপ্রবাহের বদলের ফলে কাশ্মীরে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ধেয়ে আসছে। তাই উত্তর ভারতের একটা বড় অংশে তাপমাত্রা বাড়ছে না। সেই কারণেই বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ-ভাগ্যে মন্দা দেখা দিয়েছে।” এ ভাবেই কালবৈশাখীর সম্ভাবনা শেষ করে দিচ্ছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।
আবহবিদেরা জানান, সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে (চৈত্র-বৈশাখ) বিকেলে দেখা মেলে কালবৈশাখীর। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে উত্তর-পশ্চিম কোণে (বায়ুকোণ) বজ্রগর্ভ উল্লম্ব মেঘ তৈরি হয়। তার জেরেই প্রচণ্ড ঝড় আর বৃষ্টি মেলে। কবে আসবে কালবৈশাখী? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “কালবৈশাখীর জন্য পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকতে হবে। এবং তা ঘনীভূত হয়ে নির্দিষ্ট একটি উচ্চতায় ওঠা প্রয়োজন। সেটাই হচ্ছে না।” আবহবিজ্ঞানীরা জানান, দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢোকার জন্য বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী উচ্চচাপ বলয় এবং সেখান থেকে জলীয় বাষ্প-সহ বায়ু টেনে আনার জন্য স্থলভূমিতে শক্তিশালী নিম্নচাপ অক্ষরেখা দরকার। আবহাওয়ার কিছুটা অস্থির পরিস্থিতিও কালবৈশাখীর মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে বলে এক আবহবিজ্ঞানী জানান। আবহবিদদের আশ্বাস, কালবৈশাখীর সময় এখনও পেরোয়নি। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনই যে-কোনও দিন মেঘ জমাতে পারে বায়ুকোণে। |