নির্ধারিত গুদামে গম না-থাকায় অন্য গুদাম থেকে গম তোলার জন্য ডিস্ট্রিবিউটরদের অনুরোধ করেছিল ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটররা সেই অনুরোধ না-মানায় ফেব্রুয়ারি মাসে হাওড়া জেলায় রেশনের গম পেলেন না দারিদ্রসীমার উপরে বসবাসকারী (এপিএল) কয়েক লক্ষ পরিবার। গ্রাহকদের ক্ষোভ, তাঁদের কোনও ত্রুটি না থাকলেও গোটা এক মাস রেশনের গম থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হল।
রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের হাওড়া জেলা নিয়ামক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা এফসিআইয়ের দিল্লি অফিসে আবেদন করেছি যাতে ফেব্রুয়ারি মাসের জেলার বরাদ্দ পরবর্তী সময়ে দিয়ে দেওয়া হয়।” কিন্তু তা যে সম্ভব নয়, সে কথা এফসিআই জানিয়ে দিয়েছে। এফসিআইয়ের কলকাতা ডিভিশনের এক কর্তা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে বজবজের গুদামে গম ছিল না। সেই কারণে মাত্র এক মাসের জন্য কল্যাণীর গুদাম থেকে হাওড়াকে তাদের বরাদ্দ গম নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরেরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গম না তোলায় ওই বরাদ্দ বাতিল হয়ে গিয়েছে।
এপিএল তালিকাভুক্ত গ্রাহকেরা কার্ডপ্রতি (ইউনিট) সপ্তাহে রেশন থেকে ৬০০ গ্রাম করে গম পেয়ে থাকেন। মাসে চারবার করে গম দেওয়া হয়। সেই হিসাবে একটি ইউনিটের জন্য মাসে ২৪০০ গ্রাম গম মেলে। এই গমের জন্য কেজিপ্রতি দাম পড়ে ছয়-সাড়ে ছয় টাকা। খোলা বাজারে একই গুণমানের গমের দাম কেজিপ্রতি ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
এফসিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য রাজ্য থেকে আনা ওই গম চাহিদা অনুসারে রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের সহযোগিতায় ডিস্ট্রিবিউটর এবং ডিলারদের মাধ্যমে রেশন দোকানগুলিতে পাঠানো হয়। রেশন ডিস্ট্রিবিউটররা প্রতি মাসের গোড়ায় গমের টাকা রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে জমা দেন। সেই টাকা রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতর পাঠিয়ে দেয় এফসিআইয়ের কাছে। নিয়ম হল, যে মাসে টাকা জমা দেওয়া হয় গম বরাদ্দ হয় তার পরের মাসের জন্য। এফসিআই রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতর মারফত ডিস্ট্রিবিউটরদের জানিয়ে দেয় মাসের কত তারিখের মধ্যে কোন গুদাম থেকে তাঁরা গম তুলবেন।
হাওড়া জেলায় এফসিআই বা রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের নিজস্ব গুদাম নেই। জেলার ডিস্ট্রিবিউটরদের গম আনতে হয় এফসিআইয়ের খিদিরপুরের জিঞ্জিরাপোলের গুদাম থেকে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ওই গুদামের সামনের রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। সেই কারণে ডিস্ট্রিবিউটরদের এফসিআই জানিয়ে দেয়, তাঁরা যেন বজবজের গুদাম থেকে গম তোলেন। সেইমতো গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিস্ট্রিবিউটররা বজবজের গুদাম থেকেই গম তুলছিলেন। কিন্তু জানুয়ারির শেষে এফসিআই জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসের বরাদ্দ তুলতে হবে তাদের কল্যাণীর গুদাম থেকে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটররা কল্যাণী থেকে গম আনতে রাজি হননি। ফলে, ওই মাসের বরাদ্দ ৪ হাজার ৮২৩ টন গম আর জেলার এপিএল গ্রাহকদের হাতে পৌঁছয়নি। তবে, মার্চ মাসের গম তাঁরা যথারীতি বজবজের গুদাম থেকেই পেয়েছেন। তবে, হাওড়ায় খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের নিজস্ব কোনও গুদাম না-থাকার গম-সহ রেশনের অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই সমস্যা হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন রেশন ডিলার সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম।
ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসে কল্যাণী থেকে গম আনার খরচ অনেক বেশি পড়ত। তা ছাড়া, ওই এলাকায় ট্রাকে গম ওঠানো-নামানোতে নিযুক্ত শ্রমিকেরা অপরিচিত হওয়ায় কাজ করানোর ক্ষেত্রেও সমস্যার মুখে পড়তে হত। ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশন’-এর হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক অশোক মাইতি বলেন, “বজবজ থেকে আমরা নিয়মিত গম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ কেন আমাদের কল্যাণীতে যেতে হল বুঝতে পারছি না।” তবে, কল্যাণী থেকে গম না-আনায় ডিস্ট্রিবিউটরদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের হাওড়া জেলা নিয়ামক বলেন, “ওঁদের আমরা কল্যাণী থেকে গম আনতে বলেছিলাম। কিছু অসুবিধার কথা জানিয়ে ওঁরা রাজি হননি। তা ছাড়া, বরাদ্দ বাতিল হওয়ায় ডিস্ট্রিবিউটরদের কয়েক কোটি টাকাও তো এফসিআইয়ের কাছে আটকে গিয়েছে।” |