|
|
|
|
লালগড়ে কম্বল-বিলি |
তৃণমূল নেতা বাবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলায় হুমকি |
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
আবারও লালগড়ে প্রকাশ্যে এল শাসকদলের অনিয়ম। এ বার তৃণমূল নেতা বাবার বিরুদ্ধে সরব হলেন তাঁরই ছোট ছেলে।
বিধায়ক তহবিলের টাকায় কম্বল বিলিতে তৃণমূলের লালগড় অঞ্চল কমিটির সভাপতি হারাধন মাহাতো স্বজনপোষণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর ছোট ছেলে তাপস মাহাতো। প্রতিবাদ করায় তাপসবাবুকে হারাধনবাবুর সঙ্গী তৃণমূলকর্মী তরুণ মাহাতো হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ। বুধবার লালগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাপসবাবু।
ক’দিন আগেই ‘অধিকার’ প্রকল্পে তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল লালগড়ে। তার পরই এই কম্বল-দুর্নীতি। হারাধনবাবু অবশ্য এর পিছনে ‘সিপিএমের ষড়যন্ত্র’ দেখছেন। আর যাঁর বিরুদ্ধে শাসানোর অভিযোগ, সেই তরুণেরও বক্তব্য, “সিপিএমের প্রাক্তন হার্মাদেরা তাপসকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে।” লালগড়ের সিপিএম নেতা তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাপসবাবুর সঙ্গে দলের কোনও যোগ আছে বলে মানেননি। |
|
|
হারাধন মাহাতো |
তাপস মাহাতো |
|
তাপসবাবুর অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আমলিয়া গ্রামে তদন্তে আসে লালগড় থানার পুলিশ। তাপসবাবু বাইরে ছিলেন। তবে তাঁর স্ত্রী মঞ্জুদেবী হুমকির কথা পুলিশকে জানান। আমলিয়া গ্রামে একই বাড়িতে আলাদা থাকেন হারাধনবাবু ও তাঁর ছোট ছেলে তাপসবাবু। বছর তিয়াত্তরের হারাধনবাবু অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। আর তাপসবাবু লালগড়েই বেসরকারি নার্সারি স্কুলের শিক্ষক। তাপসবাবুর অভিযোগ, কিছু দিন আগে তাঁর বাবা ও তৃণমূলকর্মী তরুণ নিজেদের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে কম্বল দেন। প্রকৃত গরিবেরা বঞ্চিত হওয়ায় প্রতিবাদ করেন তাপসবাবু। তাঁর দাবি, “আমি বলি, সরকারি জিনিস গরিব মানুষকে দেওয়া উচিত। এতেই ওঁরা চটে যান।” এরপর গত ২৮ মার্চ বাড়িতে এসে তরুণ হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তাপসবাবু তখন ছিলেন না। তাঁর মাকে শুনিয়ে বলা হয়, “সব সময় আপন-পর বোঝা সম্ভব নয়, যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারি।”
বড় পেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা তরুণ এক সময় জনগণের কমিটিতে ছিলেন। বছর তিনেক আগে গ্রেফতারও হন। বিধানসভা ভোটের আগে জামিনে ছাড়া পেয়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। তরুণের হুমকির খবর জানাজানি হতে দেরি হয়নি। স্থানীয় ক্লাবের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টাও হয়। তবে সুরাহা হয়নি। তাপসবাবুর বক্তব্য, “কম্বল বিলি করার দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। অথচ বাবা ও তরুণবাবু মিলে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কম্বল বিলি করেন।”
বৃহস্পতিবার বড় পেলিয়া চকে দাঁড়িয়ে হারাধনবাবু বলেন, “পারিবারিক কারণে ছোট ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয়। তা বলে, ও যে এ ভাবে সামান্য বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ করবে ভাবিনি।” বৃদ্ধের দাবি, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার দেওয়া কম্বলগুলি দীর্ঘদিন দলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের হেফাজতে ছিল। শীত চলে যাচ্ছে দেখে গত জানুয়ারিতে ৩৫টির মতো কম্বল চেয়ে এনে তিনি বিলি করেন। এই তৃণমূল নেতার মতে, “গরিব মানুষদেরই কম্বল দেওয়া হয়েছে। প্রাপকদের নামের তালিকাও আমার কাছে রয়েছে।”
যাঁর বিধায়ক তহবিলের টাকায় কেনা কম্বল-বিলি ঘিরে অভিযোগ, সেই সুকুমার হাঁসদা জানিয়েছেন, দলের স্থানীয় নেতাদেরই তিনি কম্বল বিলির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “এ নিয়ে অনিয়মের খবর কানে আসেনি। খোঁজ নিয়ে দেখব।” |
|
|
|
|
|