শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, আচার্যের দ্বারস্থ উপাচার্য
শিক্ষার পরিবেশ ‘নষ্ট হতে বসেছে’ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমস্যার সুরাহা করতে এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হতে চান উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী।
সমস্যার কারণ তিনি না ভাঙলেও বিশ্ববিদ্যালয় অন্দরের খবর, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক মহল, প্রশাসনিক স্তর নানা ভাগে বিভক্ত। সমন্বয়ের অভাবে নানা ‘অস্বচ্ছতা’ দেখা দিয়েছে। তা রুখতে পদক্ষেপ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন তৃণমূল জমানাতেই নিযুক্ত উপাচার্য।
উপাচার্যের কথায়, “একটা অশুভ শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। শিক্ষার স্বার্থে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির স্বার্থে কাজ করতে চাই।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছেন উপাচার্য।
ব্যাপারটা জেনে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রতিক্রিয়া, “নিয়মিত কথা হয় উপাচার্যের সঙ্গে। উনি আমাকে এ সমস্যার কথা জানাননি। বিষয়টা যখন শুনলাম, ওঁর সঙ্গে কথা বলব।”
এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিপত্য ছিল সিপিএমের। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতা হারাতেই বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণের রাশ আলগা হতে শুরু করে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের অনুগামী তথা রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এবং তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতা দখলে তৎপর হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি, সেই দ্বন্দ্বেরই জেরে অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
সমস্যার অন্যতমবিভিন্ন স্তরে ‘সমন্বয়ের অভাব’। তার সুযোগ নেয় বিভিন্ন মহল। নিয়ম ভেঙে ছুটি নেওয়ার অভিযোগ ওঠে শিক্ষকদের একাংশের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া, শিক্ষক ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত নথি বেরিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন বিভাগের প্রধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের বিবাদ চরম আকার নিচ্ছে, বিভাগীয় গবেষণা প্রকল্পের বৈঠকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের না ডেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, এমন নানা অভিযোগ পৌঁছয় কর্তৃপক্ষের কানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গবেষকের বক্তব্য, “গবেষণার কাজ, কোর্স-ওয়ার্ক নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। ডামাডোলের বাজারে কাকে জানালে সেই সমস্যা মিটবে, সেটাই বুঝতে পারছি না। যাঁদের কাছে বলতে যাচ্ছি, তাঁদের একটা বড় অংশ রাজনীতির চক্করে ব্যস্ত। আমাদের সময় দিচ্ছেন না।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক স্তরে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেন উপাচার্য। পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু সিদ্ধান্তও নেন। কর্মীদের নিয়মিত বদলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০ হাজার টাকার বেশি জিনিস কিনলেই দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেওয়া, ১ লক্ষ টাকার বেশি কেনাকাটা হলে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া--এই নির্দেশগুলি জারি করেন।
মাসখানেক আগে উপাচার্য ওই সব নির্দেশ দেওয়ার পরেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের নেতাদের সঙ্গেই দফায় দফায় বৈঠক হয় উপাচার্যের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, দুই গোষ্ঠীই একে অন্যের লোকেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, যে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বাধায় উন্নয়নের কাজের গতিও ‘শ্লথ’ হয়ে যায়। আগামী সোমবার, ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেও গোষ্ঠী-কাজিয়ার ছায়া পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক এবং কর্মীদের একাংশ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর কথায়, “বাম-আমলে যে সব সুবিধাবাদীরা ছিল, তারা এখন দুই নেতার দিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে। তারাই বিভিন্ন বৈঠকে চাপ দিচ্ছে উপাচার্যকে। ফলে, কাজের কাজ করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।” খোদ উপাচার্য বলেন, “একাধিক বৈঠক করেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা থেকেই গিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’য় শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আছেন, আবার মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ওই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা। শুভেন্দু বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি সেখানে হস্তক্ষেপ করিনি, করতেও চাই না।” পক্ষান্তরে সৌমেনবাবুর বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি দুষ্ট-চক্র এখনও সক্রিয়। চেষ্টা করছি, সেই চক্রটি যাতে ওখানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে।” কারা রয়েছেন ওই চক্রে, মদতদাতাই বা কারা? মন্ত্রীর জবাব, “বুঝতে পারছি না। তবে কেউ না কেউ তো মদত দিচ্ছে।”
ঘটনা অজানা নয় জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরিরও। তবে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে মানতে চাননি তিনি। বরং সৌমেনবাবুর সুরেই বলেছেন, “সুবিধাবাদীরা এখনও ওখানে সক্রিয়। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি কড়া হাতে দমন করার দাবি জানিয়েছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ‘ওয়েবকুপা’র বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের আহ্বায়ক তথা শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী দত্ত চৌধুরীর মতো অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, “এই ডামাডোলের সুযোগে কিছু সুবিধাবাদী বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে চাইছে। যাঁরা শিক্ষার স্বার্থে লড়াই করতে চান, তাঁদেরই পিছু হঠতে হচ্ছে।” উপাচার্য বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ যাতে ভাল হয়, পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই। আচার্যের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মিললে, সে সব কথাই বলব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.