নিজস্ব সংবাদদাতা • বাগনান ও শ্রীরামপুর |
আয়োজন ছিল জোরদার। কিন্তু দিনের শেষে ছবিটা খুব স্বস্তির হল না।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতো হাওড়ার বাগনানে রাজ্য যুব কংগ্রেসের ত্রি-স্তর (রাজ্যস্তর, লোকসভা স্তর ও বিধানসভা স্তর) পদাধিকারী নির্বাচন হয়। বাগনান রেল স্টেশনের কাছে সামিয়ানা টাঙিয়ে রীতিমতো উৎসবের মেজাজে বসেছিল ভোটের আসর। দেখার জন্যও ভিড় করেছিলেন অনেকে। ছিল ছাপানো ব্যালট পেপার, গোপন ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। ভোট দেওয়ার জন্য গরমে গলদঘর্ম হয়ে যুব কংগ্রেস কর্মীরা দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে রইলেন। বুধবার থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ পর্বের বৃহস্পতিবার ছিল শেষ দিন। রাজ্যে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র আছে। একটি লোকসভা কেন্দ্র-পিছু একটি করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হাওড়া জেলায় রয়েছে দু’টি লোকসভা কেন্দ্র। হাওড়া সদর ও উলুবেড়িয়া। হাওড়া সদরের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছিল সালকিয়ায় কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে, উলুবেড়িয়ার ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল বাগনানে।
লোকসভা কেন্দ্রের অধীন এক-একটি বুথ থেকে পাঁচ জন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন সংশ্লিষ্ট বুথের যুব কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যেরা। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এ দিন ভোট দিয়েছেন। তবে রাজ্য কংগ্রেসের দৈন্যদশার ছাপই মিলল ভোটার সংখ্যায়। উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় দু’হাজার বুথ থাকলেও ভোটার মাত্র ৩৩১ জন।
এই সংখ্যা যে অতি নগন্য, তা স্বীকার করে এই লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি পদের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম বলেন, “যথেষ্ট সংখ্যক সদস্য না থাকায় প্রতিটি বুথ থেকে পাঁচ জন করে প্রতিনিধি পাঠানো যায়নি।” |
তবে যাঁরা ভোট দিতে এসেছিলেন, তাঁদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। শ্যামপুরের সুলতানপুর থেকে ছ’মাসের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে এসেছিলেন সুলতানা বেগম। প্রায় আধঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে বেরিয়ে বললেন, “গরম তো কি হয়েছে? দলের জন্য এটুকু করতে পারব না?”
এ দিনই হুগলি জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে যুব কংগ্রেসের ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে শ্রীরামপুরে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে পরিচিত প্রার্থীরা জিতেছেন। কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টিতে আমল দিতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, জেলায় দলের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। তবে বুথের তুলনায় ভোটার যে বেশ কম ছিল, তা মেনে নেন নেতারা।
শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ভোট নেওয়া হয় শহরের কেএম শা স্ট্রিটের একটি ক্লাবে। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হয় সাহাগঞ্জে জিটি রোডে ডানলপ গেট-লাগোয়া কংগ্রেস কার্যালয়ে। আরামবাগে ভোটগ্রহণ হয় রবীন্দ্রভবনে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, চাঁপদানি বাদে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাকি ছ’টি বিধানসভার পদাধিকারী নির্বাচিত হন দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে পরিচিতেরা। এই লোকসভা কেন্দ্রে ১৭৮৬টি বুথ। ভোট পড়েছে ৪৪৫টি।
কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিছু লোক দলের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। নির্বাচনের ফলে এটা প্রমাণ হল। জেলা কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন নেতারা যাঁদের দাঁড় করিয়েছিলেন তাঁরা মুখ থুবড়ে পড়েছেন।” দলের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথ অবশ্য বলেন, “গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোট হয়েছে। যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা সকলেই দলের। এর মধ্যে উপ-দল আসবে কোথা থেকে! আর কেউ যদি এমন কথা বলে থাকেন, তা হলে কংগ্রেসের ঐতিহ্যের সঙ্গে তাঁদের যোজন দূরত্ব রয়েছে।” জেলা কংগ্রেসের একাংশের দাবি, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, এমন কিছু নেতা পরোক্ষে ভোটে প্রভাব খাটান। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। |