|
|
|
|
বসুন্ধরার রথযাত্রায় জনতা উত্তাল মোদীর নামে |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • উদয়পুর |
প্রস্তুত রথ। প্রস্তুত তার সওয়ারি বসুন্ধরা রাজেও। দশ বছর পরে ফের রথে চেপেছেন তিনি। চৈত্রের রোদ উপেক্ষা করে জমায়েত লাখো জনতা। তিন মাস ব্যাপী ‘সুরাজ সঙ্কল্প যাত্রা’র সূচনা করবেন বলে তৈরি হচ্ছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ।
তখনই ঘটল ঘটনাটা। রাজনাথ যেই ঘোষণা করলেন রাজস্থানে বসুন্ধরাই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী, হইহই করে উঠল ভিড়টা। আওয়াজ উঠল, ‘মোদী-মোদী-মোদী’! প্রায় মিনিট দশেক ধরে চলল চিল-চিৎকার। রাজনাথের আর কোনও কথাই শুনতে চাইছে না জনতা। অগত্যা কিছুটা থমকেই যেতে হল বিজেপি সভাপতিকে।
মানে কী? এই জনতার সিংহভাগই তো বসুন্ধরার অনুগামী। মহারানির রথযাত্রা দেখতেই তো তাঁরা ছুটে এসেছেন। কিন্তু মহারানির বদলে তাঁদের গলায় নরেন্দ্র মোদীর নামে জয়ধ্বনি! যিনি এ দিন বসুন্ধরার অনুষ্ঠানের ধারেকাছে ছিলেন না!
জনতার বক্তব্য, রাজস্থানে বসুন্ধরাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা তো রাজনাথ করেই দিয়েছেন। এ বারে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী পদে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নামে সিলমোহর দিন। কেন বিষয়টি নিয়ে অহেতুক ঢিলেমি করা হচ্ছে? বসুন্ধরার নির্দেশে রাজস্থানের কিছু বিজেপি নেতা মঞ্চ থেকে জনতাকে শান্ত করার অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাতেও থামছে না দাবির ঢল। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করলেন রাজনাথই। বললেন, “আপনারা যা বলতে চাইছেন, যা বোঝাতে চাইছেন, তা আমি শুনেছি। আমি বুঝেছি। এ বারে শান্ত হোন।” রাজনাথ ফের বক্তৃতা শুরুর চেষ্টা করলেন। কিন্তু বাগে এল না জনতা। প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত এ ভাবে বারবার পাশ কাটিয়ে যাওয়া তাঁদের না-পসন্দ। বেগতিক বুঝে কোনও রকমে বক্তৃতা কাটছাঁট করে বসুন্ধরার যাত্রা সূচনার ঘোষণা করে মঞ্চ ছেড়ে নেমেই গেলেন রাজনাথ। |
|
তরবারি হাতে রাজনাথ ও বসুন্ধরা। ছবি: পিটিআই |
মোদীকে নিয়ে দলের কর্মীদের এই উন্মাদনা নতুন নয় রাজনাথদের কাছে। মোদীই যে এই মুহূর্তে দলের জনপ্রিয়তম মুখ, সে কথাও বারবারই প্রকাশ্যে বলেছেন রাজনাথরা। কিন্তু এই মুহূর্তে মোদীর নাম সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পদে ঘোষণায় যে বিস্তর বাধা, সেই সত্যটিও অস্বীকার করতে পারছেন না তাঁরা। সে কারণেই ধাপে ধাপে মোদীর উত্থানের নকশা রচনা হয়েছে। সেই অঙ্ক কষেই এগোচ্ছে সঙ্ঘ-বিজেপি। কিন্তু সমর্থকদের পাশাপাশি আমজনতার মধ্যেও যে মোদীকে নিয়ে প্রবল আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে, তা ক্রমশ বুঝতে পারছেন তাঁরা। সে কারণে রাজস্থানে হারানো রাজত্ব ফিরে পাওয়ার লড়াই শুরু করতে গিয়েও মোদীকে কোনও ভাবে উপেক্ষা করতে পারছেন না বসুন্ধরা।
এবং বসুন্ধরার নিজের কথায়, তিনি তা করছেনও না। ২০০৩ সালে ‘পরিবতর্ন যাত্রা’য় নেমে রাজস্থানে গৈরিক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন বসুন্ধরা। বিপুল জয় পেয়েছিল বিজেপি। এ বারে রথযাত্রার নাম বদলে রেখেছেন ‘সুরাজ সঙ্কল্প যাত্রা’। এ বারে যাত্রা শুরুর আগেই গাঁধীনগরে গিয়ে মোদীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বসুন্ধরা। এ দিন সে কথা জানিয়ে বললেন, “আমি মোদীর সঙ্গে কথা বলেই যাত্রার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছি। যাত্রার সময়েও ওঁকে আমন্ত্রণ জানাব।” যে রথে চেপে এ দিন বসুন্ধরা গোটা রাজ্য চষে বেড়ানো শুরু করলেন, সেই রথটিও মোদীই তাঁকে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, রাজস্থানে দুর্গ জয়ের লক্ষ্যে মোদীর আঁকা সাফল্যের পথ ধরেই হাঁটতে চাইছেন বসুন্ধরা। যে থ্রি-ডি প্রযুক্তির সাহায্যে মোদী গোটা গুজরাতে প্রচার করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সামিল হয়েছেন, বসুন্ধরাও রাজস্থানে তা প্রয়োগ করতে চান। গোটা প্রচার অভিযানটিও মোদীর মতো হাইটেক করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। যে ভাবে মোদী এখন তাঁর সুশাসনের মডেল নিয়ে গোটা দেশে প্রচারে নামতে চাইছেন, ঠিক সে ভাবেই ক্ষমতায় এলে মরুরাজ্যে উন্নয়নের ফুল ফোটানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বসুন্ধরা। গড়ে তুলতে চাইছেন মোদীর মতোই ‘শিল্প-বন্ধু’ ভাবমূর্তি। সব মিলিয়ে মোদীত্বের সাফল্যে সওয়ার হয়েই সফল হতে চাইছেন বসুন্ধরাও। নিজেই বলছেন, “নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে ১৫ বছরের শাসনে অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে ইর্ষার পাত্র হয়ে উঠেছেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি গুজরাতের হাল বদলে দিয়েছেন।” মোদীত্বের গুণগানের সঙ্গে সঙ্গে নিজের সাফল্য তুলে ধরতেও অবশ্য ছাড়ছেন না মহারানি। বলছেন, “গুজরাত প্রথমে যা করেছে, আমার সময়ে রাজস্থানে তা সম্ভব হয়েছে। আমার পাঁচ বছরের মেয়াদে রাজস্থানে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার সমঝোতা পত্র সই হয়েছে। মহেন্দ্র সিটিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়েছে। উইপ্রো, ইনফোসিসের মতো সংস্থা আগে রাজস্থানে আসতে সঙ্কোচ করলেও আমার জমানায় এসেছে। এখন শিল্পমহলের মধ্যে অশোক গহলৌত সরকারের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। আমাদের আবার নতুন করে আশা জোগানোর কাজ শুরু করতে হবে। সেই হিসেব নিতেই যাত্রায় বেরোচ্ছি আমি।”
মোদী-মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই যাত্রা শুরু করেছেন মহারানিও। |
|
|
|
|
|