উনিশ শতকে নারীশিক্ষার উদ্যম শুরু হয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীতে ছবিটা আপাতদৃষ্টিতে উজ্জ্বল মনে হলেও নারী-পুরুষের পারস্পরিক শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে কি না, সংশয় থেকেই যায়। মেয়েদের শিক্ষার জন্য পুরুষদেরও শিক্ষিত হওয়া দরকার। পরিবারে পুরুষেরা শিক্ষিত না-হলে বাড়ির মেয়েদের তাঁরা শিক্ষায় উৎসাহ দেবেন কী করে? একটি মেয়েকে শিক্ষিত করা মানে আস্ত একটি পরিবারকে শিক্ষার আলো দেখানো।
বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন ফর উইমেন (হেস্টিংস ক্যাম্পাস)-এ এক আলোচনাসভায় বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যের সারমর্ম এটাই। আলোচনার বিষয় ছিল ‘একবিংশ শতকে নারীর শিক্ষা’।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপিকা উমা চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, সমাজকে শিক্ষিত করা মানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। শুধু নারীশিক্ষার হার বাড়লেই শিক্ষিতের হার বাড়বে না। উমাদেবীর মতে, একবিংশ শতকে নয়, অনেক আগেই এ দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী তার স্থান করে নিয়েছিল। আর সেই শিক্ষা ছিল সার্বিক শিক্ষা, অর্থাৎ মানবিক গুণ সমন্বিত শিক্ষা। কিন্তু বর্তমানে সেই শিক্ষারই অভাব।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার মনে করেন, নারী শিক্ষিত না-হলে পরিবার শিক্ষিত হতে পারবে না। তাঁর ব্যাখ্যা, “একটি পুরুষকে শিক্ষিত করা মানে এক জনকেই শিক্ষিত করা। কিন্তু কোনও মহিলাকে শিক্ষা দেওয়া মানে প্রকৃতপক্ষে একটি পরিবারকে শিক্ষিত করা। নারীশিক্ষার ফলে পরিবার, সমাজ এবং জাতীয় স্তরে কী কী লাভ হয়, সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে তার নমুনা তুলে ধরেন শিউলিদেবী।
এ দেশে এবং এ রাজ্যে গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের স্কুলছুট হওয়ার কারণ কী? স্কুলে মেয়েদের শৌচালয় না-থাকা, বাড়ি থেকে হাইস্কুলের দূরত্ব-সহ বিভিন্ন খামতির উল্লেখ করেন শিউলিদেবী। মেয়েদের দিয়ে বাড়ির কাজ করানো এবং কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার ঠিকঠাক থাকলেও উঁচু ক্লাসে ওঠার পরেই মেয়েদের স্কুলছুটের হার ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করেন তিনি।
এ দিনের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন হেস্টিংস ক্যাম্পাসের ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন ফর উইমেনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা শীলা মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন শিক্ষা অধিকর্তা প্রতীপ চৌধুরী, উচ্চশিক্ষা সংসদের যুগ্মসচিব ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। |