বাসের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। এবং পুলিশকর্তাদের তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে বাসটি চলছিল ধীর গতিতে। তিনি মানে হোমগার্ড আব্বাস আলি।
অথচ ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর পরে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম দাবি করেছেন, চালক বিপজ্জক ভাবে বাস চালাচ্ছিলেন। এই কারণ দেখিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগও এনেছে পুলিশ। জাভেদ জানান, বাসটি জোরেই চলছিল।
পুলিশকর্তা ও হোমগার্ডের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নতুন ধন্দ জাগিয়েছে। সে-দিন বাসের সঙ্গে থাকা হোমগার্ড আব্বাস পুলিশকর্তাদের কাছে বলেছেন, ধীর গতিতে চলতে থাকা বাসের সামনে ছুটছিলেন তিনি। বাসের পিছনে ছুটছিলেন তাঁর সহকর্মী বিশ্বজিৎ মণ্ডল। তবে সুদীপ্ত কী ভাবে বাস থেকে পড়ে গেলেন, তা নজরে আসেনি আব্বাসের। একই ভাবে তাঁর সহকর্মী বিশ্বজিতের উপরে এসএফআই সমর্থকেরা চড়াও হয়েছিল এমন দৃশ্যও তিনি দেখতে পাননি। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি জেলের সামনে তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের জানান নিউ আলিপুর থানার হোমগার্ড আব্বাস।
ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে সুদীপ্ত-সহ এসএফআইয়ের আইন অমান্যকারীদের গ্রেফতার করে সে-দিন যে-বাসে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আব্বাস ও বিশ্বজিৎ ছিলেন তাতেই। |
বিশ্বজিৎ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও আব্বাস থানায় কাজ করছেন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন ওই বাসের সামনের গেটে। পিছনের গেটে বিশ্বজিৎ। হাতে তাঁদের কোনও লাঠি ছিল না।
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ঘটনার দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে বাস-ভর্তি এসএফআই-সমর্থকদের নিয়ে রওনা দেন বিশ্বজিৎ ও আব্বাস। প্রেসিডেন্সি জেলে ঢোকার আগেই বাস থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন সুদীপ্ত। পুলিশ বাসচালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এসএফআই থেকে পাল্টা মামলা দায়ের করা হয় পুলিশের বিরুদ্ধে। আবার এসএফআই-সমর্থকদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করে পুলিশ। লালবাজারের কর্তাদের একাংশের দাবি, মারধরে আহত হয়ে বিশ্বজিৎ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাই ঘটনার বিবরণ জানতে আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তাঁরা।
কী জানিয়েছেন আব্বাস?
তদন্তকারীরা জানান, বাসের সামনে ও পিছনের গেটে থাকা আব্বাস ও বিশ্বজিৎকে শ’খানেক এসএফআই-সমর্থক ক্রমাগত গালিগালাজ করছিলেন। বেশ কয়েক বার জামাকাপড় ধরে টানাটানিও করা হয়। রেড রোডে এক বার বাস থামিয়ে রাস্তায় শুয়েও পড়েন গ্রেফতার হওয়া এসএফআই-সমর্থকেরা। মিনিট পাঁচেক পর ফের তাঁরা বাসে ওঠেন। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “জেলে ঢোকার আগে, ডি এল খান রোডের সেতু থেকে নামার পরে এসএফআই-সমর্থকেরা ফের বাস থেকে নেমে পড়েন। আব্বাস জানিয়েছেন, ধৃত ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে প্রেসিডেন্সি জেলের দিকে যাবেন বলে বাস থামিয়ে নেমে পড়েন। কিন্তু পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বদলে তাঁরা উঠে পড়েন বাসে। বলেন, জেল গেটের সামনেই তাঁরা নামবেন।”
লালবাজার সূত্রের খবর, সেই সময় বাসে উঠতে পারেননি কর্তব্যরত দুই হোমগার্ড। ফলে ধীর গতিতে এগোতে থাকা বাসের আগে ছুটতে থাকেন আব্বাস। বিশ্বজিৎ ছুটতে থাকেন বাসের পিছনে।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, বাসের সামনে ছুটতে ছুটতেই আচমকা ‘পড়ে গেল, পড়ে গেল’ চিৎকার শুনে আব্বাস পিছন ফিরে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবক মাটিতে পড়ে রয়েছেন। দেখেই তিনি ছুটে যান। তত ক্ষণে নেমে পড়েছেন এসএফআই-সমর্থকেরাও। এর পরেই আব্বাস পুলিশের গাড়ি ডাকতে কাছেই প্রেসিডেন্সি জেলের গেটের দিকে ছুটে যান। সেই গাড়িতেই আহত সুদীপ্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আব্বাস ঢুকে পড়েন প্রেসিডেন্সি জেলে।
ঘটনার পরে তাঁর সহকর্মী বিশ্বজিৎকে মারধোর করার অভিযোগ উঠলেও বাসের সামনের দিকে থাকার কারণে তাও চোখে পড়েনি আব্বাসের। পুলিশকর্তাদের তিনি জানিয়েছেন, তত ক্ষণে তিনি জেলের গেটের কাছে চলে গিয়েছিলেন। বাসের কাছে কী হচ্ছে, তা নজরে পড়েনি তাঁর। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ফিরে পুলিশকর্তাদের কাছে রিপোর্ট দেন আব্বাস। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎ এবং তিনি বাসে উঠতে পারলে এই ধরনের ঘটনা হয়তো ঘটত না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন আব্বাস। তাঁর বক্তব্য, তাঁরা বাসের গেটে থাকলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু উত্তেজিত ছেলেরা তাঁদের ঠেলে ফেলে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় তাঁরা বাসে ওঠেননি। |