বাসে কিছু বদল হলে গচ্চা ছ’লক্ষ, আতান্তরে মালিক
ছ’লক্ষ টাকার বন্ড। মামলার নিষ্পত্তির আগে বাসের চাকা থেকে রং কোনও কিছুর পরিবর্তন করা যাবে না। যখনই প্রয়োজন হবে, আদালতে অথবা থানায় নিয়ে যেতে হবে বাসটিকে। শর্ত ভাঙলে বন্ডের ছ’লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। এমনকী মালিকের জেলও হতে পারে।
মঙ্গলবার রানি রাসমণি রোডে আইন অমান্যকারী এসএফআই-সমর্থকদের যে-বাসে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার মালিক তারকমণি পাণ্ডেকে এই নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক। ওই বাসেই ছিলেন এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্ত। বৃহস্পতিবার বিচারকের নির্দেশ শুনে হতাশায় ভেঙে পড়েন বাসের মালিক। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “একেই বাসের ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। তার উপরে এই নির্দেশ...।” মাঝপথে কথা থামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তারকবাবু। সেই সন্ধ্যায় টিভিতে তাঁর বাসটি বাজেয়াপ্ত করার খবর শুনে রাতেই হেস্টিংস থানায় হাজির হন হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা তারকবাবু।
ঘটনার দিন সকালে এসপ্লানেড চত্বর থেকে তারকবাবুর ৫৯ নম্বর রুটের ডব্লিউবি-১১বি/২৭৮২ নম্বর বাসটি আটক করেছিল পুলিশ। এসএফআইয়ের আইন অমান্যকারী ছাত্রদের গ্রেফতার করে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার জন্যই রাস্তা থেকে আচমকা বাসটিকে আটক করা হয়। মালিককে তা জানিয়েছিলেন চালক রাজা দাস। কিন্তু ওই বাসে থাকা ছাত্রনেতার মৃত্যুকে ঘিরেই যে তোলপাড় হচ্ছে গোটা রাজ্য, সন্ধ্যা পর্যন্ত তা জানতে পারেনি তারকবাবু। টিভির পর্দায় নিজের বাসটি দেখার পরে গভীর রাতে থানায় যান তিনি।
পুলিশের অভিযোগ, ওই বাস বিপজ্জনক ভাবে চালানোর জেরেই এক আইন অমান্যকারীর মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযোগে বাসচালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগও দায়ের করে পুলিশ। বাসটিকে আটক করা হয়। বুধবার বাসচালককে গ্রেফতার করে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হলে বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। কিন্তু ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছেন বাস-মালিক তারকবাবু। তিনি জানান, ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে ২০০৯ সালে বাসটি কিনেছিলেন। এখনও ঋণের সব টাকা শোধ করা হয়নি। এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশ শুনে তাঁর মাথায় হাত পড়েছে। “এক ফোঁটা রং চটলেই যে ছ’লক্ষ টাকা গচ্চা। তার উপরে কারাবাসের আশঙ্কা। কী যে হবে,” তারকবাবুর স্বরে দুর্ভাবনা।
বিচারকের নির্দেশ শোনার পরে এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের দোতলার সিড়িতে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলছিলেন তারকবাবু, “মনে হয় না, বাস আর রাস্তায় নামানো যাবে। কোথা থেকে কী হয়ে যাবে! তখন আমাকে জেলে যেতে হবে।” সংসার খরচ ছাড়াও দুই ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনার খরচ রয়েছে। এক ছেলে ইঞ্জিনিয়রিং এবংএক মেয়ে ডাক্তারি পড়ছেন। দু’জনেই কলকাতার বাইরে পড়াশোনা করছেন। তারকবাবুর আইনজীবী আরিফ রহমান বলেন, “প্রায় এক বছর তো মামলা চলবেই। তত দিন বাসটিকে চোখের মণির মতো নজরে রাখতে হবে। রং চটে গেলে ঝুঁকি রয়েছে। যে-অবস্থায় বাস ফেরত নিলেন তারকবাবু, মামলার প্রয়োজনে সেই অবস্থাতেই সেটিকে যখন-তখন থানায় নিয়ে যেতে হবে।”
এখন বাসটি নিয়ে ঠিক কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না তারকবাবু। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “বাস না-চললে কিস্তি শোধ করব কী করে? আবার বাস রাস্তায় চললে যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা হলেই বিপদ।” আকাশের দিকে তাকিয়ে তারকবাবু বলে ওঠেন, “হায় ঈশ্বর, কেন এই ব্যবসায় এসেছিলাম! এখন কী করব, তুমিই বলে দাও। হে ঈশ্বর!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.