নিজস্ব সংবাদদাতা • মুরারই |
একটি রান্নাশালা থেকে আগুন ছড়িয়ে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হল ৩৪টি মাটির বাড়ি। দেড় বছরের এক শিশু-সহ তিনজন জখমও হলেন। আগুনের কবলে মারা পড়েছে বেশ কিছু গবাদিপশুও। বৃহস্পতিবার মুরারইয়ের কলুতোড়া গ্রামের ঘটনা।
মুরারই ২ ব্লকের বিডিও আবুল কালাম বলেন, “খবর পেয়েই এলাকায় পোঁছেছিলাম। তখনও আগুন জ্বলছিল। নিকটবর্তী দমকল কেন্দ্র ৫০ কিমি দূরে থাকায় বাড়িগুলিকে আগুনের গ্রাস থেকে বাঁচানো যায়নি। গ্রামবাসীরাই যতটুকু যা করেছেন, পরে দমকল পৌঁছে বাকি সাহায্য করেছে। তবে ৩৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে পুড়ে গিয়েছে।” বিডিও জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের প্রাথমিক ভাবে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কম্বল, মাথার ছাউনি ও খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জখমদের স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বিডিও ছাড়াও এলাকায় গিয়েছিলেন মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ ভকত, মুরারই ১ ব্লকের ত্রাণ দফতরের আধিকারিক প্রিয়রঞ্জন সাহা-সহ স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও সদস্যেরাও।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ প্রথম আগুন লাগে গ্রামের দক্ষিণপাড়া ফুটবল মাঠ সংলগ্ন মলয় রাজবংশীর বাড়ির রান্নাশালায়। স্থানীয় বাসিন্দা হিরেন রাজবংশী, বিবেক ঘোষ-রা বলেন, “ওই সময়ে বাড়ির ছোটরা রান্নাশালায় গমের আঁটি নিয়ে রান্না করছিল। প্রচণ্ড হাওয়ায় রান্নাশালার চালায় কোনও ভাবে আগুন ধরে যায়। সেই আগুনই নিমেশের মধ্যে পাশের বাড়িগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।” ঘটনার সময় পাড়ার অধিকাংশ পুরুষ মানুষ মাঠের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরিবারের মহিলাদের চিৎকারে তাঁরা আগুন লাগার খবর পান। আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়া হরিপদ রাজবংশী বলেন, “খবর পেয়েই এলাকার মানুষ স্থানীয় কয়েকটি পুকুরে এবং পাড়া লাগোয়া একটি বড় নালায় পঁচিশটি জল তোলা পাম্প সেট লাগিয়ে আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েন। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে রামপুরহাট থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এলাকায় পৌঁছে আগুন ছড়ানো আটকায়।”
এ দিকে আগুন লাগার সময় বাড়ির ভেতরে ঘুমিয়ে ছিল উজ্জ্বল রাজবংশীর দেশ বছরের মেয়ে বর্ষা। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে উজ্জ্বলবাবু জখম হন। জখম হয়েছে বর্ষাও। কোতন রাজবংশীও বাড়ির আসবাবপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বের করার সময় আগুনে অল্প বিস্তর জখম হয়েছেন। অন্য দিকে, আগুন লাগার আধঘণ্টার মধ্যেই রামপুরহাট দমকল কেন্দ্রে খবর দেওয়া হয়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন রামপুরহাট থেকে ৫০ কিমি দূরত্বে থাকা কলুতোড়া গ্রামে যখন পৌঁছতে পারে তখন ঘড়িতে দুপুর সওয়া একটা। দমকলকর্মীরা এলাকায় পৌঁছে দশ-বারোটি বাড়ির আগুন নেভাতে সক্ষম হন। তার আগে এলাকাবাসী অবশ্য বেশ কিছু বাড়ির আগুন নিভিয়ে ফেলেন। দমকলের রামপুরহাট কেন্দ্রের আধিকারিক স্বপন দত্ত বলেন, “দূরত্বটাই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। তা ছাড়া রাস্তাও খারাপ ছিল, মাঝে দু’টি রেলগেটও পেরতে হয়েছে। তা না হলে এতগুলি বাড়ি পুড়ত না।”
গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শেখর ঘোষ বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির অধিকাংশই দিন মজুর। কেউ কেউ ভাগচাষিও। আগুনে বাড়িগুলির কড়িবর্গা পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ওই পরিবারগুলির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল।” |