দোল পেরিয়েছে বেশ কয়েক দিন, তবু রঙের রেশ ফুরোয়নি এখনও। বিশেষত মন্তেশ্বরের সিংহালি, জয়রামপুর, বেলেজুরি ইত্যাদি গ্রামে নবম দোল উৎসব না পেরোলে দোল সম্পূর্ণ হয় না। সিংহালি গ্রামের অধিকারী বাড়ির তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো এই দোল উৎসব এ বছর হল বৃহস্পতিবার। প্রায় ১২ পুরুষ ধরে তাঁরা ওই উৎসব পালন করে আসছেন।
মন্তেশ্বর ব্লকের সিংহালি গ্রামেই একমাত্র রয়েছে এই নবম দোলের রেওয়াজ। এই দোল না হওয়া পর্যন্ত গ্রামবাসীরা রঙ স্পর্শ করেন না। তাঁদের বিশ্বাস দেবতাকে উৎসর্গ করা রঙের পরশে সংসারে সুখ, সমৃদ্ধি আসে। অধিকারী বাড়ির ভেতরের গোপীনাথ মন্দিরের রাধাকৃষ্ণের মূর্তিকে ঘিরেই এই পুজো হয়। থাকে অনুষ্টানও। কষ্টিপাথরের কৃষ্ণ আর অষ্টধাতুর রাধা মূর্তিকে ঘিরে আগের রাত থেকেই শুরু হয় চাঁচর বা প্রস্তুতি। |
মন্দিরের কাছাকাছিই বাঁশ ও খড় দিয়ে বানানো হয় নেশাসুর। যা অশুভ শক্তির প্রতীক। আগের রাতে এই নেশাসুরকে পুড়িয়েই সূচনা হয় উৎসবের। পরে সকালে হয় রাধাকৃষ্ণের অঙ্গরাগ ও ষোড়শপচারে পুজো। পুজোর পরে যুগল মূর্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় কিছুটা দূরের দোলতলায়। দেবতার সামনে সেখানেই শুরু হয় রঙের উৎসব। চলে প্রায় বিকেল পর্যন্ত। গ্রামের মেঠো রাস্তার পাশে মেলাও বসে। সন্ধ্যায় গৃহদেবতা ফেরেন মন্দিরে। সন্ধ্যারতির পরে শেষ হয় উৎসব। আগে অধিকারী বাড়িতে দোলের দিন তিন গ্রামের লোককে পাত পেড়ে খাওয়ানো হত। সে রেওয়াজ ভাঙলেও এখনও গ্রামের বহু মানুষকে ভোগ খেতে নিমন্ত্রণ করা হয়। অধিকারী পরিবারের মিঠুন অধিকারী, তপন অধিকারী, গোপাল অধিকারীরাও বলেন, “এই উৎসব নামেই পারিবারিক। এলাকার মানুষের স্বতস্ফূর্ত যোগ দানে তা সবার হয়ে উঠেছে।” |