এক মাস ধরে খারাপ পড়ে পাম্প, শুকোচ্ছে কৃষ্ণসায়র
শুকিয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণসায়র। ক্রমশই নেমে যাচ্ছে তার জলস্তর। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরোবরের চারপাশের ফুলগাছও। অথচ এক মাসের বেশি সময় ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে ওই জলাশয় সংলগ্ন পাম্প। বেহাল অবস্থা অন্যান্য পরিকাঠামোরও। সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন কৃষ্ণসায়র প্রাঙ্গনে অবস্থিত কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন বা ক্যাডের প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রী।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই মূলত রয়েছে কৃষ্ণসায়র। দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কৃষ্ণসায়র অছি পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তত তিনশ’ বছরের পুরনো এই জলাশয়। বর্ধমানের রাজা কৃষ্ণরাম রাই(১৬৯০-৯৫) দুর্ভিক্ষের সময়ে প্রজাদের কাজ দিতে এই জলাশয় খনন করান। পরের দিকে রাজাদের নানা কাজের দরকারে ওই পুকুরের জল আনানো হতো। এরপরে নয়ের দশকে এখানে গড়ে ওঠে একটি পরিবেশ কানন। একসময়ে সর্প উদ্য্যান, পাখিরালয়, মীন আবাস সবই ছিল ওই উদ্যানে। সবই অবশ্য বিভিন্ন অব্যবস্থায়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কৃষ্ণসায়রও ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়ার দিকে।
প্রাতঃভ্রমণকারীদের দাবি, বারবার পরিষদের দায়িত্বে থাকা কর্তা থেকে শুরু করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দরবার করেও খারাপ হয়ে যাওয়া পাম্প সারানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের অন্যতম রামদাস দত্ত, তপনকুমার মণ্ডল, স্বরাজ মজুমদার, দিলীপ খাণ্ডেলওয়ালাদের ক্ষোভ, “আমাদের চোখের সামনে কৃষ্ণসায়র শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছগুলোও মরে যাচ্ছে। এখানে অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। অনেকে ছবিও তুলতেও আসেন। কিন্তু জল শুকিয়ে গেলে কি আর পরিযায়ী পাখিরা আসবে?”
বিকল পাম্প। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ক্ষোভ, কৃষ্ণসায়র তো শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা শহরের সম্পত্তি নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক বছরের ইতিহাস। এলাকার পরিবেশের প্রশ্নও রয়েছে। এই কৃষ্ণসায়র শুকিয়ে গেলে তার প্রভাব হবে ভয়ঙ্কর। কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া।
ক্যাডের অধ্যক্ষ আবেশবিভোর মিত্র বলেন, “প্রায় এক মাস ধরে আমাদের পানীয় থেকে শৌচাগারে ব্যবহারের জলও বাইরে থেকে আনাতে হচ্ছে। ভাস্কর্য তৈরি ও ছবি আঁকার কাজে তা বড় রকমের সমস্যা তৈরি করছে। এমনকী বন্ধ করে দিতে হয়েছে প্রাকটিক্যাল ক্লাসও।” এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ব্যাচেলার অব ফাইন আর্টসের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে এই কলেজ চত্বরেই। পড়ুয়া রাধেশ্যাম বসাক, মৃত্যুঞ্জয় বসাকদের কথায়, “পাম্প খারাপের জেরে আমাদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চড়া দামে বাইরে থেকে জল কিনতে হচ্ছে আমাদের।” ছাত্রী মালবিকা চট্টোপাধ্যায়, অপরূপা নন্দীমজুমদরের কথায়, “পরিস্থিতি এমন চললে, আমাদের কলেজে আসাই বন্ধ করে দিতে হবে।” অধ্যক্ষের দাবি, এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা অছি পরিষদকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মীদের কথায়, “প্রতিদিন বিকেলে বেড়াতে আসা লোকেদের কাছে জল না থাকায় আমাদের কথা শুনতে হচ্ছে। এদের অনেকেই আমাদের মারধরও করতে আসছেন। আমরাও বারে বারে বলেছি, পাম্প সারাতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গা করছে না।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “জল তল কেন নেমে যাচ্ছে, তা জানতে আমি ভূগোল বিভাগকে একটি সমীক্ষা করতে বলেছিলাম। কিন্তু ওই বিভাগের কারিগরি দক্ষতা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে বছর খানেক আগে মাছ ধরার সুবিধার জন্য ওই সায়রের জল পাম্প করে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তখন কিন্তু কেউ কোনও প্রতিবাদ করেননি।” অছি পরিষদের সম্পাদক তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন,“খারাপ হয়ে যাওয়া পাম্প সারাতে প্রয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাগবে। এর জন্য ভাল মিস্ত্রির দরকার। সেটা পাওয়া যাচ্ছে না বলে পাম্প সারাতে দেরি হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.