সরাসরি হাওড়া এবং শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। শিল্পশহরের ঝকঝকে স্টেশনের সঙ্গে মানানসই চলমান সিঁড়ি গড়ার প্রস্তাবও উঠেছে বহু আগেই। একের পর এক রেল বাজেট পাশ হয়েছে। কিন্তু দু’টির কোনওটিই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। সরাসরি ট্রেন চালুর আশু সম্ভাবনা নেই জানালেও দুর্গাপুর স্টেশনে চলমান সিঁড়ি গড়ার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
আসানসোলের মতো দুর্গাপুর শহর থেকেও সরাসরি হাওড়া ও শিয়ালদহ ট্রেন চালু হোক, অনেক দিন ধরেই এমন দাবি জানিয়ে আসছেন দুর্গাপুরবাসী। লালুপ্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সেই স্বপ্নকে উস্কে দিয়ে যান। একটি রেল উড়ালপুলের শিলান্যাস করতে ২০০৭ সালের ৩০ জুন দুর্গাপুরে আসেন তিনি। তাঁর কাছে দুর্গাপুর থেকে হাওড়া এবং শিয়ালদহগামী লোকাল চালুর দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেয় তৃণমূল ও রেল নিত্যযাত্রী সমিতি। মঞ্চে বসেই লালুপ্রসাদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পরবর্তী রেল বাজেটে দুর্গাপুর-হাওড়া লোকাল ট্রেন চালুর প্রস্তাব রাখা হবে। কিন্তু পরে রেল বাজেটে সে প্রসঙ্গ উল্লেখ হয়নি। বছরখানেক পরে তৎকালীন রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া দুর্গাপুরে জানান, সেই বছর অগস্ট থেকে দুর্গাপুর-হাওড়া লোকাল ট্রেন চালুর ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে রেল। দুর্গাপুরে বৈদ্যুতিক ট্রেনের টার্মিনাল না থাকায় কী ভাবে এখান থেকে লোকাল ট্রেন চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু বাসুদেববাবু বলেছিলেন, “ট্রেনগুলি আসানসোল থেকে দুর্গাপুরে ফাঁকা আসবে। এর পরে দুর্গাপুরে যাত্রী নিয়ে হাওড়া যাবে। মাঝে এক বার শুধু বর্ধমানে থামবে।” কিন্তু সেই ট্রেন আর চালু হয়নি। মডেল স্টেশন হওয়ার পরে নতুন ভাবে সেজেছে দুর্গাপুর স্টেশন। পূর্ব রেলের হিসেবে, মাসে গড়ে প্রায় ৪ লক্ষ ২১ হাজার যাত্রী দুর্গাপুর স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁদের একটা বড় অংশ বয়স্ক, শিশু ও মহিলা। তাঁদের সুবিধার জন্য চলমান সিঁড়ি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। প্রয়োজনীয় সমীক্ষার পরে জায়গাও নির্দিষ্ট করা হয়। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
সম্প্রতি দুর্গাপুরবাসীর এই দুই দাবি নিয়ে রেলমন্ত্রী পবন বনশলের কাছে দরবার করেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ সইদুল হক। তিনি বলেন, “রেলমন্ত্রীর কাছে দুর্গাপুরবাসীর এই দুই দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করার পরে রেলমন্ত্রী জানান, বিষয়টি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী দেখবেন।” মার্চের মাঝামাঝি অধীরবাবু সইদুল হককে চিঠি দিয়ে জানান, বর্তমানে হাওড়া ও শিয়ালদহগামী ৩১ জোড়া মেল-এক্সপ্রেস এবং দু’জোড়া ফাস্ট প্যাসেঞ্জার দুর্গাপুর স্টেশনে দাঁড়ায়। যাত্রীসংখ্যার নিরিখে এই মুহূর্তে আর দুর্গাপুর থেকে আর নতুন ট্রেন চালু লাভজনক হবে না। ভবিষ্যতে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে বলে আশ্বাস তাঁর। তবে অধীরবাবু চিঠিতে লিখেছেন, দুর্গাপুর স্টেশনে দু’টি চলমান সিঁড়ি বসানোর বরাত ইতিমধ্যেই এক সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বছরখানেকের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। |