খেতে আগুন, গম নষ্ট শ’দুয়েক চাষির
ম কাটার পর পড়ে থাকা খড় পোড়াতে জমিতে লাগানো হয়েছিল আগুন। সেই আগুন ছড়িয়ে ছাই হয়ে গেল আশপাশের বহু গমের খেত। বুধবার মালদহের গাজল ও দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের দু’টি ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় শদু’য়েক চাষি।
বাসিন্দারা পুলিশ-প্রশাসনকে জানান, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ নিজের জমির গম কেটে জমিতে আগুন দেন গাজলের দেওতলা পঞ্চায়েত এলাকার চাষি ইশাক মিঁয়া। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেই আগুন বাতাসে ছড়িয়ে এলাকার নন্দরপাড়া, ভান্ডারিপাড়া, পদমপুকুর, বিজলবাড়ি, শরানপাড়া, সূযর্পাড়া, কাশিমপুর, উষরপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার বিঘার পর বিঘা পাকা গম ছাই হয়ে যায়। পথে বসেছেন প্রায় ১৫০ চাষি। স্থানীয় বাসিন্দারা আটটি পাম্পসেট দিয়ে জল দিয়েও আগুন নেভাতে পারেননি। বাতাসের সঙ্গে আগুনের হল্কা বিঘার বিঘার জমির গম পুড়িয়ে দেয়। খবর দেওয়ার প্রায় ঘণ্টা তিনেক পর মালদহ ও গঙ্গারামপুর থেকে দমকল পৌঁছনোর আগেই জমির গম জমিতেই ছাই হয়ে যায়।
আগুন লাগানোর ঘটনায় অভিযোগের তির যার দিকে সেই ইশাক মিঁয়া পলাতক। তাকে গ্রেফতার ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে দেওতলার কাছে মালদহ-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন চাষিরা। জেলাশাসকের নির্দেশে বেলা তিনটে নাগাদ সদর মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু মিত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছনো মাত্রই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
গাজলের গ্রামে পরিদর্শনে প্রশাসনের আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, “আমরা ইশাক মিয়াঁকে অনেক বার নিষেধ করে বলেছিলাম এখন প্রচণ্ড বাতাস বইছে আগুন দিও না। ও উল্টে হুমকি দেয়। ও আগুন না লাগালে এত চাষিকে পথে বসতে হত না।” ইশাক মিঁয়ার ছেলে আফজল মিঁয়া বলেন, “বাবাকে বারবার বলেছিলাম আশপাশের জমির গম কাটার পরই আগুন লাগিও। কিন্তু বাবা কোনও কথাই শুনল না।”
পুষ্পেন্দুবাবু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডিএসপি ও গাজল থানার ওসিকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে ও ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত চাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ যখন পৌঁছয় তখন জমিতে আগুন জ্বলছিল। কার জমি থেকে আগুন লেগেছে তা পুলিশ দেখেনি। গ্রামবাসীরা নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।”
এ দিন দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা যায় তখনও জমি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। চোখ যতদূর যাচ্ছে ততদূর জমি কালো হয়ে গিয়েছে। চোখের সামনে ১২ বিঘা জমি ছাই হতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বিজলিবাড়ি গ্রামের নজরুল শেখ। গ্রামবাসীরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরান। জ্ঞান ফেরার পর কাঁদতে কাঁদতে নজরুল শেখ বলেন, “সাত দিন পর আমার মেয়ের বিয়ে। গম কেটে তা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ের খরচ চালাব ভেবেছিলাম। এখন আমি কী করব?” আটটি গ্রামে যাঁদের সমস্ত জমির গম পুড়ে গিয়েছে তাঁদের অধিকাংশেরই নিজেদের জমি নেই। মহাজনের থেকে লিজ নিয়ে ও স্থানীয় সমবায়িকা থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করে সংসার চালান। ভান্ডারপাড়ার শেখ আব্বাস আলি বলেন, “দেওতলা কৃষি উন্নয়ন সোসাইটি থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০ বিঘা জমিতে গম লাগিয়েছিলাম। সব পুড়ে গিয়েছে। কী ভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করব?”
দেওতলা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান ফারহাদ হোসেনের অভিযোগ, “তিন ঘন্টা পর দমকল পৌঁছয়। দমকল তাড়াতাড়ি আসলে এত ক্ষতি হত না।” জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কী পরিমাণ গমের ক্ষতি হয়েছে সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর ক্ষতিপূরন দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। তার আগে প্রতিটি পরিবারকে চাল দেওয়া হচ্ছে।”
অন্য দিকে, এ দিন সকালেই খড়ের আগুন থেকে প্রায় ১৬ বিঘা গমের খেত পুড়ে যায় দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর থানার গোকর্ণ অঞ্চলের টেংলু গ্রামে। গঙ্গারামপুর থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এবং পরে কালিয়াগঞ্জ থেকে একটি ইঞ্জিন পৌঁছে চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্বে আনে। প্রশাসন সূত্রের খবর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহের সীমান্ত গ্রাম দেওতলা এলাকায় সকাল ৯টা নাগাদ কেটে নেওয়া খেতে গমের খড়ে আগুন লাগে। হাওয়ায় ওই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে জেলার মেহেন্দিপাড়া থেকে টেংলু গ্রামের প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে। পুড়ে যাওয়া ১৬ বিঘা জমির মধ্যে ৮ বিঘাতে গম ছিল। এলাকায় যান হরিরামপুরের বিডিও নিশীথ ভাস্কর দাস। দমকলের আধিকারিক সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “গমের খেতে কে আগুন দিয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়। তবে ওই ঘটনা বন্ধ হওয়া দরকার।” টেংলু গ্রামের কৃষক নূর আলম বলেন, “দেরিতে চাষ করায় গম কাটতে কয়েকদিন বাকি ছিল। এর মধ্যে সর্বনাশ হয়ে গেল।”
(সহ প্রতিবেদন: অনুপরতন মোহান্ত)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.