গ্রামের এক প্রান্তে ভগ্নপ্রায় বেলপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশা। দিনের পর দিন চিকিৎসা না পেয়ে লোকজন আর হাসপাতালমুখো হন না।
প্রায় অর্ধ শতাব্দী পুরনো হাসপাতালের নির্দিষ্ট কোনও সীমানা নেই। হাসপাতাল চত্বর হয়ে উঠেছে গবাদি পশুর চারণক্ষেত্র। গরু-মোষের বিষ্টা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাসপাতালের অভ্যন্তরে। আবাসনের সংস্কার হয়নি প্রায় এক দশক ধরে। ভাঙাচোরা আবাসন পরিণত হয়েছে গোয়ালঘরে। আবাসন কক্ষে গরু-মোষ বাঁধা থাকে। আবাসনের দরজা-জানালা ভেঙে নিয়ে যায় স্থানীয় দুর্বৃত্তেরা। নজরদারির কোনও বালাই নেই। এ যেন হরির লুঠ চলছে। সাকুল্যে এক জন সাফাইকর্মী। তাঁর আবার নিয়মিত পা পড়ে না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ফল যা হওয়ার তাই। বুক সমান আগাছা বেড়ে উঠেছে বিনা বাধায়। কস্মিনকালেও ঝাঁট পড়ে না হাসপাতালে। নোংরা-আবর্জনা স্তূপীকৃত হয়ে রয়েছে। একটু দমকা হাওয়াতেই উড়ে আসে সেই নোংরা। পূতিগন্ধময় এই পরিবেশে কী আরোগ্য সম্ভব! নিয়মানুযায়ী একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪ জন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মী থাকার কথা। কিন্তু এখানে রয়েছে মাত্র ২ জন। তার মধ্যে সাফাইকর্মী সপ্তাহে মাত্র ২-৩ দিন আসেন বলে অভিযোগ। |
বেলপুকুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গবাদি পশুর অবাধ যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র। |
প্রায় ৩০ হাজার লোক এই বেলপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। আশপাশের রাজাপুর, ঈশ্বরপুর, বলাইনগর, সোনডাঙা প্রভৃতি গ্রামের অধিবাসীরা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু হাসপাতালেরই তো গভীর অসুখ। নেই-এর লম্বা তালিকা। পরিষেবা মিলবে কী ভাবে? স্বাস্থ্য দফতরের নিয়মানুসারে ২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। রয়েছেন এক জন। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। এ্যালাপ্যাথির ডাক্তারবাবু মাস তিনেক হল কলকাতার হাসপাতালে বদলি হয়েছেন। যিনি রয়েছেন, তিনি আবার প্রতিদিন আসেন না বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি তাঁর দেখা মেলে না। সরকারি নির্দেশিকায় রয়েছে, ডাক্তারবাবুকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ‘আউটডোর ডিউটি’ করতে হবে। কিন্তু চিকিৎসক সঠিক সময়ে আসেন না বলে নালিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের। গ্রামবাসী পরিমল ঘোষ বা মুকুন্দ ঘোষেরা বলেন, “ফার্মাসিস্ট বা নার্স রোগের দাওয়াই বাতলে দেন। এটুকুও রোজ মেলে না।” স্থানীয় বেলপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কংগ্রেসের শীতল ঘোষ বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ডাক্তারবাবুর পাত্তা পাওয়া যায় না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা ওষুধ দেন। তাই সামান্য সর্দি-জ্বরেই লোকজনকে প্রায় আট কিলোমিটার মেঠো পথ উজিয়ে ধুবুলিয়ায় ছুটতে হয়। অবস্থা একটু বেগতিক হলেই দৌড়তে হয় জেলা সদর কৃষ্ণনগরে।”
সমস্যার কথা মেনেছেন কৃষ্ণনগর-২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বিথীকা লোধ। তিনি বলেন, “ওই হাসপাতালে বিভিন্ন শূন্যপদ রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত পরিষেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। তবে কোনও ডাক্তার বা কর্মীর গাফিলতি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।” |