শিলিগুড়ি পুরবোর্ডে আপাতত ‘সংখ্যালঘু’ দল হয়েও এককভাবে ডেপুটি মেয়র ও ৭ জন মেয়র পারিষদ নিয়োগ করলেন কংগ্রেসের মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। বুধবার দুপুরে মেয়র ডেপুটি মেয়র সহ ৮ জন মেয়র পারিষদকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। ২০০৯ সালে বামেদের হটিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল পুরবোর্ড দখলের পরে এই নিয়ে ৪ বার মেয়র পারিষদ বদলের ঘটনা ঘটল। ৪ বছরে চার বার মেয়র পারিষদ বদল করার জেরে পরিষেবা ও উন্নয়নের দিকে বর্তমান পুরবোর্ডের কতটা নজর রয়েছে তা নিয়েই জনমানসে নানা প্রশ্ন উঠেছে। মেয়র ‘সব ঠিকঠাক চলবে’ বলে মন্তব্য করলেও বিরোধী নেতারা নানা অভিযোগ তুলছেন।
শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দল নেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের অভিযোগ, “পুরসভা চালানোর নামে যে তামাশা হচ্ছে তা শহরবাসী দেখছেন। নাগরিক সমাজ উন্নয়ন ও পরিষেবা নিয়ে এ হেন তামাশা পছন্দ করবেন না।” পাশাপাশি, সম্প্রতি কংগ্রেসের মেয়রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তৃণমূল কংগ্রেসও মেয়রেকে কটাক্ষ করেছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা মহাসচিব তথা পুরসভার কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, “মেয়র পারিষদ গঠন করা হলেও বোর্ডে সংখ্যালঘু হওয়ায় ওঁরা কোনও কাজই করতে পারবেন না। বড় জোর নানা কাজের তদারকি করতে পারবেন। কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কারণ, সিদ্ধান্ত নিলে তা বোর্ড মিটিঙে পাস করাতে হবে। যা কি না সংখ্যালঘু হয়ে পড়া কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের পক্ষে কখনও এককভাবে সম্ভব নয়। এতে বরং পুরসভা খরচ বাড়ল।” যদিও পুরসভার মেয়রের দাবি, সব ঠিকই চলবে। তিনি বলেন, “পুরবোর্ড চালাতে সব কাউন্সিলরদের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। অতীতেও সব কাউন্সিলর সাহায্য করতেন। আগামী দিনেও করবেন বলে আমি আশাবাদী।”
২০০৯ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল উভয়েই ১৫টি করে আসনে জিতে বামেদের হটিয়ে পুরসভার কর্তৃত্ব পায়। কিন্তু, মেয়র পদে তৃণমূলের তরফে গৌতম দেব ও কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্তের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। সেই কংগ্রেসের মেয়র পদপ্রার্থী জয়ী হন। বামেদের সমর্থনেই কংগ্রেস জিতেছে, এই অভিযোগে বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ায় তৃণমূল। বামেদের সমর্থনে প্রায় ১৮ মাস এই বোর্ড পরিচালনা করে কংগ্রেস। ২০১১ তে রাজ্য রাজনীতির পালাবদলে পরিবতর্ন আসে শিলিগুড়ির পুরবোর্ডেও। বোর্ড ভেঙে তৃণমূলের সঙ্গে হাত ধরে মেয়র পারিষদ গঠন করে কংগ্রেস। ১১ জুলাই নতুন করে শপথ নিয়েছিলেন তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র সহ চারজন মেয়র পারিষদ এবং কংগ্রেসের মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী সহ তিন জন মেয়র পারিষদ। তৃণমূলের সমর্থনে বোর্ড চলাকালীন বিল্ডিং বিভাগ নিয়ে বারবার অভিযোগ ওঠায় কংগ্রেস নিজেদের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদদের পরিবর্তন করেন।
ইতিমধ্যে নান্টু পাল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে কংগ্রেস বোর্ডে সবচেয়ে কম আসন প্রাপ্ত দল হয়ে পড়ে। নান্টুবাবু ভোটাভুটিতে হেরে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন। পরে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে তিনি জিতলে নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। সে দিনই তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র সহ মেয়র পারিষদের অপসারণ করেন মেয়র। কদিন পরে বাজেট অধিবেশনের সময়ে তৃণমূল লিখিত ভাবে কংগ্রেসের মেয়রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে। ঘটনাচক্রে, নান্টুবাবুর দলত্যাগ ও বাজেট পাস সংক্রান্ত বিতর্কের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
এই অবস্থায় এ দিন মেয়র ডেপুটি মেয়র হিসেবে সবিতা অগ্রবাল, মেয়র পারিষদ হিসেবে সুজয় ঘটক, স্বপন চন্দ, দেবশঙ্কর সাহা, সঞ্জয় পাঠক, পম্পা দাস, রুমা নাথ, শিখা রায়ের নাম ঘোষণা করেন। ৬ রুমা দেবী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। পূর্ত বিভাগ,খেলাধূলার দায়িত্ব পেয়েছেন সুজয় ঘটক। জঞ্জাল ও পরিবেশ বিভাগের দায়িত্বে স্বপন চন্দ, স্বাস্থ্য ও পার্কিং এর দায়িত্বে শিখা রায়। বস্তি উন্নয়ন যানবাহন বিভাগের মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক এবং ট্রেড লাইসেন্সের দায়িত্বে দেবশঙ্কর সাহা। তবে বিল্ডিং বিভাগ নিজের হাতে রেখেছেন মেয়র। তবে মেয়র পারিষদ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সীমা সাহাকে। |