এসজেডিএ’র তিন কার্যনির্বাহী বাস্তুকার-সহ কর্মী আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধে বহু কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হল ডিওয়াইএফ ও দফতরের তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত কর্মী সংগঠন। মঙ্গলবার ডিওয়াইএফের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ জানান, আগামী ৫ এপ্রিল তাঁরা ‘এসজেডিএ চলো অভিযান’ করবেন। তিনি বলেন, “এসজেডিএ’র পদাধিকারিক থেকে নিচু স্তর পর্যন্ত সর্বত্র দুর্নীতি হয়েছে। নতুন সরকারের আমলে এসজেডিএ’র দুই চেয়ারম্যানই তা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
আইএনটিটিইউসি নিয়ন্ত্রিত এসজেডিএ’র কর্মচারী সমিতির সভাপতি অরূপরতন ঘোষও এ দিন অভিযুক্ত বাস্তুকারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, “যে সব প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সে সব খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় আমরাও সেই দাবি জানিয়েছি।” এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার এসজেডিএ’র বোর্ড মিটিংয়ের পরে মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, গৌতম মজুমদার এবং অনুপ মল্লিক এই তিন জন কার্যনির্বাহী বাস্তুকার এবং তিন জন জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্ল্যানার রিঙ্কি সাহা, অনিরুদ্ধ প্রামাণিক এবং মৌসুমী রায়ের পদাবনতির কথা জানিয়ে দেন গৌতমবাবু। জোড়াপানি নদী সংস্কার, ত্রিফলা আলো, আনারস কেন্দ্র, কাওয়াখালি এলাকায় রাস্তা, পাঁচিল তৈরি, টি পার্ক, ড্রাইপোর্ট, ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন তৈরি, তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি যে কাজ শুরু হয়েছে তাতে যুক্ত ওই বাস্তুকার এবং কর্মীরা। ওই সব কাজে বহু কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মৃৃগাঙ্কবাবু, গৌতমবাবু বা অনুপবাবুরা অবশ্য এ দিনও অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। বাস্তুকার গৌতমবাবু বলেন, “যা বলার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকই বলবেন।”
এসজেডিএ সূত্রের খবর, বছরখানেক আগেও ‘কোটেশন’-এর মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি টাকা দিয়ে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে নিকাশি পাম্প কেনার অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের মাঝামাঝি ওই পাম্প কেনা হয়। ওই কাজে মৃগাঙ্কমৌলি সরকার-সহ একাংশ বাস্তুকার, কর্মী-আধিকারিক যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ দফতরের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র জ্যোতির্ময় মজুমদারের ভূমিকা নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে এসজেডিএ-তে। ওই পাম্প বসাতে যে রিপোর্ট তৈরি হয় তা সমীক্ষা করে দেখে নগরোন্নয়ন দফতর জানিয়েছিল যে পাম্প বসানোর কথা প্রকল্পে ছিল তার প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন পাম্প বসালেই চলবে। তাতে অর্থের সাশ্রয়ও হবে। সেই নির্দেশ মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, ওই প্রকল্প রূপায়ণের একাধিক দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র জ্যোতির্ময়বাবু। যিনি ত্রিফলা আলো লাগানো, আনারস কেন্দ্র গড়ার কাজেও যুক্ত ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে দেন। বর্তমানে তাঁর স্থলাভিষিক্ত কেউ হননি। তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র পদে চাকরি পেয়েছেন সপ্তর্ষি পাল। যিনি ঘটনাচক্রে, জ্যোতির্ময়বাবুরই ভাগ্নে। তাঁর নিয়োগের ইন্টারভিউ বোর্ডে জ্যোতির্ময়বাবু ছিলেন কী ভাবে সেই প্রশ্নও উঠেছে। জ্যোতির্ময়বাবু সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। এসজেডিএ সূত্রের খবর, বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতমবাবু প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবু বলেছেন, “বর্তমান চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখছেন। পুরনো নথি না দেখে পাম্প কেনা নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “আগের থেকে যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারণা না থাকায় পাম্প কেনার জন্য কোটেশন করতে হয়। তা ছাড়া নগরোন্নয়ন দফতর থেকে সমীক্ষা করে যে পাম্প কেনার কথা বলা হয়েছিল সেই মতোই কেনা হয়।” যদিও অভিযোগ, কলকাতার একটি ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে কোটেশনের মাধ্যমে ওই পাম্প কেনা হয়। তিন বছর পাম্প দেখভালের খরচ ধরা হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। অথচ কোম্পানি থেকে সরাসরি কিনলে ওই টাকার অধিকাংশই বাঁচানো যেত বলে এসজেডিএ-এর অফিসারদের একাংশের দাবি। |