নিজস্ব সংবাদদাতা • গঙ্গাজলঘাটি |
চুল্লি ফেটে ছিটকে আসা গলিত লোহায় ঝলসে গেলেন ১০ জন ঠিকা শ্রমিক। বুধবার সকালে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার নিধিরামপুরে একটি ইস্পাত তৈরির কারখানায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। জখমদের মধ্যে ৯ জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও বাকি এক জনকে দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শ্রমিকদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরেই কারখানার কর্তাব্যক্তিরা সেখান থেকে পালান। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। খবর পেয়ে কারখানায় যান গঙ্গাজলঘাটির বিডিও উর্মি দে বিশ্বাস। তিনি বলেন, “কারখানায় গিয়ে দেখেছি কর্মী নিরাপত্তার বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। আমি দুর্গাপুরের ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেছি। তারপরেই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “বিকেলে নিধিরামপুরের বাসিন্দাদের একাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করছে।”
কারখানা সূত্রের খবর, এ দিন সকাল প্রায় সাড়ে ন’টায় লোহা গলানোর চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে। কারখানার শ্রমিক মহানন্দ চক্রবর্তী, শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত লোহাররা বলেন, “আমরা ওই চুল্লি থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে শব্দ হল, মাটি কেঁপে উঠল আর চারপাশ কালো ধোঁয়ায় ভরে গেল। কিছু বুঝতে না পেরে কারখানা থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যাই। পরে জানা যায়, চুল্লি ফেটে তার ভিতরে থাকা গলিত লোহায় পুড়ে গেছেন ১০ জন শ্রমিক। আমরাই বাইরে থেকে গাড়ি নিয়ে এসে ওঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।” শ্রমিকদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ জখম হওয়া শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টে পালিয়ে যান। কারখানা নিয়ে তাঁদের অব্যবস্থার অভিযোগও রয়েছে। শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, লোহা গলানোর চুল্লিগুলি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চালিয়ে বন্ধ রাখা উচিত। অথচ ওই কারখানায় তিনটি চুল্লি ২৪ ঘন্টাই চালানো হয়। ফলে এই বিস্ফোরণ ঘটা অস্বাভাবিক নয়।
স্থানীয় বিধায়ক স্বপন বাউরির অভিযোগ, “কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ উদাসীন। কারখানায় অ্যাম্বুলেন্স নেই, প্রাথমিক চিকিৎসারও কোনও ব্যবস্থা নেই। চুল্লিগুলি একটানা চলাতেই এই দুর্ঘটনা।” কারখানার কর্ণধার এস সারোগিয়া অবশ্য অভিযোগগুলি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “জখম শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, জখমরা হলেন গঙ্গাজলঘাটির রাজারামপুরের সন্তোষ মাঝি, কার্তিক ঘোষ, মদনপুরের তপন ওঝা, কালোসোনা ওঝা, উজ্বল ওঝা, কুস্থোলিয়ার বিজয় সিং, জহর লায়েক, সত্যপ্রিয় বিশ্বাস ও জলেশ্বর দাস ও আসানসোলের বরুন দাস। |