মেলেনি বিদ্যুৎ, সঙ্কটে বিকল্প চাষ
রাজ্য সরকার চাষিদের বিকল্প চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন। আর রাজ্য সরকারেরই বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতে শশা ও তরমুজ চাষ করে সেচের জন্য বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না চাষিরা। এমনই অভিযোগ উঠেছে মানবাজার ব্লকের কুদা গ্রামে। পাম্প কিনেও বিদ্যুৎ সংযোগ না মেলায় প্রায় ৬৫ জন চাষি বিপাকে পড়েছেন।
কুদা গ্রামে আগে এ সময়ে সামান্য কিছু জমিতে বোরো ধানের চাষ হত। বেশির ভাগ জমিই পড়ে থাকত। কিন্তু ধানের বাজারদর ভাল না হওয়ায় কয়েক বছর ধরে ওই গ্রামের চাষিরা তরমুজ ও শশা চাষ করা শুরু করেন। লাভজনক হওয়ায় এখন গ্রামের অধিকাংশ চাষিই ধান ছেড়ে তরমুজ ও শশা চাষে নেমে পড়েছেন। এ বার প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে তরমুজ ও শশা চাষ হচ্ছে। আশপাশের পুকুর থেকে জল টেনে এনে এত দিন চাষ হলেও এ বার ফল ধরার মুখেই পুকুরের জল শুকিয়ে যাওয়ায় চাষিরা সঙ্কটে পড়েছেন। তাঁরা জানান, ভূগর্ভস্থ জল তোলার জন্য চাঁদা তুলে তাঁরা পাঁচ অশ্বশক্তি ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সাবমার্সিবল পাম্প কিনেছেন। চাষিদের মধ্যে অশ্বিনী মাহাতো, সাগর মাহাতো বলেন, “রাজ্য সরকার বিকল্প চাষে আগ্রহ দেখানোয় ভেবেছিলাম পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করলেই তা পেয়ে যাব। কিন্তু কোথায় কী? মার্চ মাসের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করা হয়। এখনও পর্যন্ত তা পেলাম না। এ দিকে জলের অভাবে চাষ নষ্ট হতে বসেছে।” চাষি বুচন মাহাতো, অজিত মাহাতোরা জানান, শসা গাছে ইতিমধ্যেই ফল ধরতে শুরু করেছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে তরমুজ গাছেও ফল ধরবে। তাঁদের আশঙ্কা, “আর এক সপ্তাহের মধ্যে জমিতে সেচের জল না মিললে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।”
সমস্যার কথা পৌঁচেছে জেলার কৃষি কর্তাদের কাছেও। মানবাজার ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা শান্তিগোপাল কর্মকার বলেন, “কুদা গ্রামের কয়েকজন চাষি আমার কাছে এসেছিলেন। শীঘ্রই সেচের জল না মিললে তাঁদের কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। ওঁদের বিদ্যুৎ দফতরে যোগাযোগ করতে বলেছি।” নিয়ম অনুযায়ী সেচের জন্য পাম্প বসাতে গেলে ক্ষেত্র বিশেষে রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের (সুইড) অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। তাদের ছাড়পত্র পেলেই বিদ্যুৎ সংযোগ মেলে। সুইডের পুরুলিয়ার বিভাগীয় আধিকারিক অনুপকুমার দত্ত বলেন, “পাঁচ অশ্বশক্তি সম্পন্ন পাম্প বসালে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার বেশি ক্ষমতার পাম্প বসিয়ে সেচের কাজে ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নেওয়া দরকার।”
তা হলে কুদা গ্রামে সাবমার্সিবল চালাতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না কেন? বিদ্যুৎ দফতরের মানবাজারের স্টেশন সুপারিন্টেডেন্ট বিজন দুয়ারি বলেন, “ওই এলাকার চাষিরা মার্চ মাসের গোড়ায় বিদ্যুৎ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের কর্মী কম। সম্প্রতি কর্মীরা কুদা গ্রামে গিয়ে জমি পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেখানে পাম্প চালানোর জন্য স্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আমাদের আপত্তি নেই। কৃষি দফতরকেও তা জানিয়েছি। বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ চলছে।” সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির (অ্যাবেকা) পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মদন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “সাধারণত আবেদনের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই সেচের পাম্প চালানোর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতরের কিছু কর্মীর গাফিলতির বলি হতে যাচ্ছে বিকল্প চাষের এই উদ্যোগ।” গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি অবশ্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। তাঁদের দাবি, বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ চলছে। তাতে অবশ্য স্বস্তিতে নেই চাষিরা। তাঁদের প্রশ্ন, “পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে। চাষ বাঁচাবে তো?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.