বেহাল পরিকাঠামোর জেরে খুবই দুর্দশায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা পুলিশ ক্যাম্পগুলি। ক্যাম্পগুলির প্রায় সবকটিতেই চরম অব্যবস্থা সত্ত্বেও তার মধ্যেই তাঁদের ঘাড়ে থাকা নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব সামলে চলেছেন ক্যাম্পের কর্মীরা।
জেলা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫-২০ বছর আগে জেলার বিভিন্ন থানার এলাকায় ডাকাতি, গাড়ি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা লেগেই থাকত। এমন রাজনৈতিক কী রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলার পুলিশ কর্তারা ঠিক করেন উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে। সেইমত গোটা জেলায় ৭০টি পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করা হয়। ঠিক হয়, ক্যাম্পগুলিতে একজন পুলিশ অফিসার এবং ৪ থেকে ৫ জন পুলিশকর্মী থাকবেন। জেলা জুড়ে পুলিশ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হলেও ক্যাম্পগুলিতে পুলিশকর্মীদের থাকার বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবিতে ওঠানো যায়নি ওই সব পুলিশ ক্যাম্প। এর ফলে অধিকাংশ পুলিশ ক্যাম্পই চলছে বেহাল পরিকাঠামোর মধ্যেই। |
বেহাল পরিকাঠামোর এমনই নমুনা দেখা গেল রায়দিঘির কাশীনগর বাজারে একটি পুলিশ ক্যাম্পে। বহু বছর ধরে থাকা পাঠাগারটিকেই বদলে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ক্যাম্পে। ক্যাম্প বলতে টিনের চালার দু’টি ঘরে চার-পাঁচ জন পুলিশকর্মী রয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কোনওরকম সংস্কার না হওয়ায় ক্যাম্পের ইটের দেওয়াল ও টিনের চালের শোচনীয় অবস্থা। দেওয়ালে ছোট-বড় ফাটল। জরাজীর্ণ টিনের চালের বহু জায়গাতেই ফুটো। বর্ষায় জল পড়ে। ফলে রাইফেল ছাতার তলায় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। দেওয়ালে গজিয়ে উঠেছে গাছ। ক্যাম্পের এমনই অবস্থা যে জোরে ঝড় উঠলে হুড়মুড়িয়ে চাপা পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা। রয়েছে পানীয় জল এবং শৌচাগারের সমস্যাও। একই অবস্থা ডায়মন্ড হারবার ও মন্দিরবাজার থানার পুলিশ ক্যাম্পগুলিতেও। মন্দিরবাজারের মুলদিয়া পুলিশ ক্যাম্পগুলিতে অ্যাসবেসট্যাসের ছাউনি। ছোট ছোট ঘরে থাকতে হয় পুলিশকর্মীদের। পানীয় জল সংগ্রহ করে আনতে হয় গ্রামের নলকূপ থেকে।
জেলা পুলিশের নির্দেশে ক্যাম্পগুলি চললেও এগুলির বেশিরভাগই অস্থায়ী। ফলে অধিকাংশ ক্যাম্প কোথাও ক্লাবঘরে, কোথাও স্কুলবাড়িতে, পোড়োবাড়িতে বা মন্দিরের দালানে চলে আসছে। বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। ভরসা স্বল্প সময়ের জন্য সোলার আলো।
তবে ক্যাম্পগুলি চালু হওয়ার পর এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা যে কমেছে তা স্বীকার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু যে পুলিশকর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, তাঁদের থাকার কি আর একটু ভাল ব্যবস্থা করা যেত না?
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) অলোক রাজুরিয়া বলেন, “ক্যাম্পগুলি অস্থায়ী। ফলে পাকাপাকি ভাবে কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি। তা ছাড়া দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমার পর ক্যাম্প সরানোর চেষ্টা হলে বাসিন্দারা বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের দাবিতে ক্যাম্প রেখে দিতে হয়েছে। তাই এই অবস্থা। তবে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।” |