বার্সেলোনা: ২ (মেসি, জাভি)
প্যারিস সাঁ জাঁ: ২ (ইব্রাহিমোভিচ, মাতুইদি) |
বেঙ্গালুরুতে আমার টিমের সন্ধেয় ম্যাচ থাকলেও তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাত জেগে টিভিতে বার্সেলোনা-প্যারিস সাঁ জাঁ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা দেখলাম একটা কারণেই। বর্তমান ফুটবল দুনিয়ার মহানায়ক আর ট্র্যাজিক নায়কের লড়াইটা কোন উচ্চতায় ওঠে দেখতে।
আমার মতে মেসি যদি বিশ্ব ফুটবলের অর্জুন হয়, তা হলে ইব্রাহিমোভিচ হল কর্ণ। কর্ণের মতোই অর্জুনের দীর্ঘ ছায়ায় ঢেকে থাকার আক্ষেপ বয়ে বেড়ায়। তাই একটা নাটকীয় ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলাম। প্যারিসে প্রথম লেগের ম্যাচে ওরা দু’জনই গোল করল। কিন্তু নিজেদের সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারল কই? মেসি প্রথমার্ধে গোল করে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরায় বসেই গেল। ইব্রা হাফটাইমের পর ১-১ করল বটে। কিন্তু ওর খেলা দেখে মন ভরল না।
বার্সার তিকিতাকা রুখতে ঘরের মাঠে প্যারিস সাঁ জাঁ-র ইতালীয় কোচ কার্লো আনসেলোত্তি কাউন্টার অ্যাটাক স্টাইল নিয়েছিলেন। সঙ্গে ধার করেছিলেন সেই বিখ্যাত মোরিনহো-মডেল। ডিফেন্স লাইনের সামনে আলট্রা ডিফেন্সিভ স্ক্রিন। মেসি-ইনিয়েস্তা-জাভিদের প্রথমে নিজেদের অর্ধে ট্যাকল করো। তার পর কাউন্টার অ্যাটাকে যাও লাভেজ্জি, পাস্তোর আর ব্রাজিলিয়ান লুকাস মউরা-র গতি এবং লং বল পাসিং সম্বল করে। |
সাঁ জাঁ ডিফেন্স থিয়াগো সিলভার নেতৃত্বে মেসিদের পাসা-পাস-পাসকে দাঁত বসাতে দিচ্ছিল না। মাঝমাঠে ইনিয়েস্তারা বল ধরলেই মাতুইদিরা পায়ের জঙ্গল তৈরি করছিল বারবার। তা হলেও প্রশ্ন, যে ফুটবলার শেষ তিন বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পুরো নব্বই মিনিট খেলেছে সেই মন্থর ‘ফ্যান্সি প্লেয়ার’ বেকহ্যামকে এই ম্যাচে এক ঘণ্টার উপর মাঠে রাখার ঝুঁকি কেন নিলেন আনসেলোত্তি? গোটা কয়েক সেটপিস সিচুয়েশনেরর জন্য? একে বয়স হয়েছে। তায় বেকহ্যাম কোনও দিনই জেরার, ল্যাম্পার্ডের মতো পরিশ্রমী ফুটবল খেলে না। বেকহ্যাম বিখ্যাত জনসংযোগ, পোশাক, চুলের স্টাইলের জন্য। যেমন সত্তরের বিশ্বকাপে পেলের পাশে ভাল খেলত টোস্টাও, গারসন, কিন্তু নাম হত নায়কোচিত চেহারার রিভেলিনোর। আনসেলোত্তির চাল আরও ভেস্তে গেল বার্সার ব্রাজিলীয় রাইট ব্যাক দানি আলভেস দুরন্ত খেলায়। মেসির গোলে যে বলটা আলভেস বাড়িয়েছিল বহুদিন মনে থাকবে।
তবে বার্সা রক্ষণে কয়েক দিন আগেই আনন্দবাজারে আমার লেখা একটা ফ্যাক্টর খেটে যেতে দেখলাম। লিখেছিলাম, পুয়োল-পিকের, পরিবর্ত খোঁজার সময় এসেছে। গত রাতেও একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে ইব্রাকে আটকাতে পিকে হিমশিম খাচ্ছিল। ইব্রা ভয়ঙ্কর হতে না পারায় বড় বিপদ হয়নি। ইনজুরি সময়ে বার্সা কিপার ভালদেসের বিশ্রী গোল খাওয়া দেখে গুরপ্রীত সিংহের কথা মনে পড়ছিল। তবে গোলকিপাররাও মানুষ। ভুল হতেই পারে। বরং কষ্ট লাগছে মাতুইদির কথা ভেবে। জাভির শেষ মুহূর্তে গোলের পরেও বেচারা অমন নাটকীয় ভাবে সাঁ জাঁ-কে ২-২ সমতায় ফেরাল। কিন্তু হলুদ কার্ড দেখে ফিরতি ম্যাচ খেলতে পারবে না। বার্সাও মাসচেরানোকে পাচ্ছে না। তবে অ্যাওয়ে ম্যাচে দু’টো গোল করে রাখায় সুবিধাজনক জায়গায় তিতো ভিলানোভার ছেলেরাই। পরের সপ্তাহে ন্যু কাম্পে তাঁর পুরনো ক্লাব এ সি মিলানের দশা না হয় আনসেলোত্তির! খোঁচা খাওয়া মেসিরা কিন্তু আরও ভয়ঙ্কর!
|
মেসির চোট নিয়ে জল্পনা নিজস্ব প্রতিবেদন |
কার্ড সমস্যার পাশাপাশি হাঁটুর লিগামেন্টে চোট নিয়ে আট সপ্তাহ মাঠের বাইরে জেভিয়ার মাসচেরানো। আগামী সপ্তাহে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফিরতি ম্যাচে তিনি নেই। বার্সেলোনার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে প্যারিস সাঁ জাঁ ম্যাচে ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেলেন মেসিও। তিনি লা লিগার পরের ম্যাচে নেই। বেকহ্যামের দলের বিরুদ্ধেও মেসির খেলা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। |