শান্তিবন চত্বরে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের জন্য জলাধার, জল শোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা ঘিরে বিতর্কের মুখে পড়েছে কোচবিহার পুরসভা। শহরের বিবেকানন্দ স্ট্রিট লাগোয়া ওই এলাকায় মরা তোর্সার নদীর পাড় ঘেষে থাকা গাছ কেটে ‘ওভারহেড রিজার্ভার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বসানোর জন্য জমি চিহ্নিত হয়েছে। এলাকায় প্রকল্পটির সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়েছে। বন দফতর সূত্রের খবর, জমিতে প্রকল্পের কাজ করতে ৩৮৬টি গাছকাটার জন্য অনুমতি চেয়ে দাম নির্ধারণ করার আবেদন জানিয়েছে পুরসভা। তারমধ্যে ১৫০-র মত গামারি ছাড়াও সেগুন, কদম, শিমূল গাছ রয়েছে। বনমন্ত্রীর জেলায় ঘটনার কথা জানাজানি হতেই পরিবেশপ্রেমী মহলে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস ও তৃণমূল-এর পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে ছাত্র পরিষদ, যুব কংগ্রেসও। সবুজ ধ্বংস এড়িয়ে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নের দাবি তুলে বুধবার কোচবিহারের ডিএফওকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্র পরিষদ। যুব কংগ্রেসের তরফেও গাছ কাটার উদ্যোগ বন্ধ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেছেন, “বিষয়টি শুনেছি। জনস্বার্থে গাছ কাটার ব্যাপারে আপত্তি করতে চাই না। তবে কিছু পদ্ধতিও মানতে হয়। তার মধ্যে একটি গাছ কাটা হলে দুটি গাছ লাগানোর মত বিষয় রয়েছে। এই নিয়ম মেনে ওই প্রক্রিয়া চলছে কি না খোঁজ নিচ্ছি।” কোচবিহারের ডিএফও ভগবান দাস বলেন, “জল প্রকল্পের জন্য ৩৮৬টি গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পুরসভা। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত হবে।” |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি জল প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ৩৬ কোটি টাকা অনুমোদনও পোয় পুরসভা। শহর সংলগ্ন কালীঘাট এলাকার তোর্সা নদীর জল তুলে এনে তা শোধনের পর বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের জন্য ওভারহেড রিজার্ভার, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ার জন্য শান্তিবন চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরসভার কংগ্রেসের চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু বলেন, “জল প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৩৬ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। ৮ কোটি টাকা’র ই-টেন্ডার করে কাজের দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শান্তিবনে প্রকল্পের জন্য গাছ কাটা প্রয়োজন। শহর আর শান্তিবনের গাছপালা পুরসভা লাগিয়েছিল। বর্ষায় শান্তিবন-সহ শহরে ১০ হাজার গাছ লাগানো হবে। জনস্বার্থে কিছু গাছ কাটা জরুরি। মানুষ বিষয়টি বুঝবেন বলে আমাদের আশা।”
যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব অবশ্য পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মানতে নারাজ। জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, “আমরা জল সমস্যা মেটানোর কাজের বিরোধী নই। বিকল্প জায়গা থাকার পরেও বিপুল সংখ্যক গাছ কাটার চেষ্টা মানা যায় না।” আর ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অরিন্দম দে জানান, মরা তোর্সা লাগোয়া ওই এলাকায় একসঙ্গে এত গাছ কাটলে পরিবেশে প্রভাব পড়বে। প্রকল্পটি তাই বিকল্প জায়গায় করার দাবি জানানো হয়েছে।” কংগ্রেস সূত্রে খবর, যুব কংগ্রেস এবং ছাত্র পরিষদের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী জেলা পুর চেয়ারম্যানের বিরোধী বলে পরিচিত। সেই জায়গা থেকেই পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁরা পুরসভার ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। |