সদ্য মা হওয়া গন্ডারকে হত্যা করল শিকারিরা। ঘটনার পর থেকে গন্ডারের শাবকেরও দেখা মিলছে না। ফলে মানসে গন্ডার প্রতিস্থাপন প্রকল্প ফের বড় ধাক্কা খেল।
গন্ডারহীন হয়ে যাওয়া মানস জাতীয় উদ্যানের কাছ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের তকমা কেড়ে নিয়েছিল ইউনেসকো। এরপর ‘ইন্ডিয়ান রাইনো ভিশন-২০২০’ ও ‘ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’-র যৌথ উদ্যোগে কাজিরাঙা পশু উদ্ধার কেন্দ্র ও জাতীয় উদ্যান এবং পবিতরা অভয়ারণ্য থেকে ২৩টি গন্ডারকে মানসে প্রতিস্থাপিত করা হয়। মানসও ফিরে পায় বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের সম্মান। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে একটি ও এ বছর ২০ মার্চ দু’টি গন্ডারের বাচ্চাও হয়। পরিবেশবিদরা নিশ্চিন্ত হন, প্রতিস্থাপিত গন্ডাররা নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে বংশ বিস্তার শুরু করেছে। কিন্তু তিনটি প্রতিস্থাপিত গন্ডার এর মধ্যেই শিকারিদের হাতে প্রাণ দেওয়ায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। কাল রাতে প্রতিস্থাপিত হওয়া ১৭ নম্বর গন্ডারটিকেও শিকারিরা হত্যা করল। ২০ মার্চ এই স্ত্রী গন্ডারটির বাচ্চা হয়েছিল।
উদ্যান অধিকর্তা অনিন্দ্য স্বরগোয়ারি জানান, বাসবাড়ি রেঞ্জের কাহিতেমা বিটে ঘটনাটি ঘটে। গত কাল রাতে কাপুরপাড়া বন শিবিরের কাছে শাবকের সামনেই ‘রাইনো-১৭’-কে হত্যা করা হয়। |
কুড়ুলের কোপে কেটে নেওয়া হয় মা-গন্ডারটির খড়্গ। আজ সকালে তার খড়্গহীন দেহ মেলে। সাধারণত চোরাশিকারিরা .৩০৩ রাইফেলই গন্ডার মারতে ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য একে-৪৭ রাইফেলের গুলিতে ১৩ বছর বয়সী গন্ডারটিকে হত্যা করা হয়েছে। তার খড়্গের পাশাপাশি নখ ও মাংসও শিকারিরা কেটে নিয়ে যায়। কাজিরাঙা থেকে আনা এই গন্ডারটির নাম রাখা হয়েছিল হাইনারি। বড়ো ভাষার যার অর্থ সুন্দরী। এই নিয়ে, চলতি বছরে রাজ্যে মোট ১৫টি গন্ডার মারা গেল। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে শিকারিদের পরিচয় জানতে পেরেছে বলে বন দফতরের সূত্রের দাবি। তাদের ধরতে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
চিকিত্সক ভাষ্কর চৌধুরী জানান, মা-হারা শাবকটি অরণ্যে একা বাঁচতে পারবে না। সন্ধ্যা অবধি শাবকটির সন্ধান মেলেনি। ডব্লিউটিআই-এর সনাতন ডেকা সন্ধ্যায় বলেন, “যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি বনের অনেক ভিতরে। ময়না তদন্ত করে বনকর্মী ও চিকিত্সকের দল এখনও বাঁশবাড়ি রেঞ্জে ফেরেনি। রাতে মা-হারা শাবকটিকে বাঘেও খেতে পারে। সকাল হলে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” মানস জাতীয় উদ্যানে গন্ডার নিধন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ডব্লুডব্লুএফ জানায়, উদ্যানের পরিকাঠামো, সুরক্ষা-ব্যবস্থা এখনও আধুনিক করা হয়নি। বাকি ২২টি বড়-ছোট গন্ডারের প্রাণ রক্ষায় বনকর্মীদের অতি-সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বড়ো স্বশাসিত পরিষদের উপ-প্রধান খাম্পা বরগয়ারি বলেন, “আমাদের হাতে রক্ষীর সংখ্যা কম। তবু এমন ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অসম ও বড়োভূমির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। শিকারীদের ধরতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |