জমেনি চৈত্র সেলের বাজার, উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা
বাজার থেকে বেরিয়েই ঝাঁজিয়ে উঠলেন ভদ্রমহিলা। নবদ্বীপের পোড়া মা তলা মোড়ে দাঁড়িয়ে চৈত্রের রোদে রীতিমতো ঘেমে রেগে লাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বললেন, “সস্তার জিনিস কিনতে আসিনি। দামি জিনিস কম দামে দেওয়ার কথা সেল-এ। কিন্তু সেটা এক কথা আর সস্তার জিনিস কেনা আর এক কথা।” রিকশা ধরে তিনি চলে গেলেন বাড়ি।
একটু দূরেই দোকানে তখন চুপ করে দাঁড়িয়ে দোকানের কর্মচারী প্রহ্লাদ সাহা। যাও-বা একজন ক্রেতা এসেছিলেন, তিনিও রেগে বেরিয়ে গেলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেও ক্ষোভই উগরে দিলেন, “চৈত্রের সেল-এ ভিড় হচ্ছে না। ভেবেছিলাম মাস পয়লা হলে চাকরিজীবীরা আসবেন কেনাকেটা করতে। তাঁরাও নেই। যাও বা একজন দু’জন আসছেন, কম দামে ভাল জিনিস চাইছেন। তা কী করে দেওয়া যাবে?”
বাংলা নববর্ষ আসতে এখনও দিন দশেকের বেশি। কিন্তু গ্রাম বাংলার সদর মফস্সলের বাজারের সংকীর্ণ রাস্তা জুড়ে লম্বা অস্থায়ী দোকানের পসরা সেখানে আলপিন থেকে আলতা কিংবা জুতো থেকে জামা থরে থরে সাজানো সব দোকানেই ঝুলছে ‘সেল’-এর বোর্ড। কিন্তু যাঁদের জন্য সেল তাঁরা কই? কপালে ক্রমশ ভাঁজ বাড়ছে বিক্রেতাদের। ছবিটা করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ থেকে নাকাশিপাড়া সর্বত্রই।
পসরা সাজিয়ে অপেক্ষাই সার। —নিজস্ব চিত্র।
নবদ্বীপের ব্যবসায়ী ধ্রুব রায় বলেন, “রবিবার থেকেই কার্যত সেলের বাজার চালু হবে বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু হয়নি।” আর এক ব্যবসায়ী বাবুলাল সাহার কথায়, “একটা সময় ছিল যখন এই মাইনের দিন থেকেই সেল-এর বাজার উপছে পড়ত। পোড়া মা তলা থেকে রাধাবাজার ভিড়ে গমগম করত। এমনটা আর হয় না।”
সেল নিয়ে মানুষের ধারণা বদলে যাওয়াটাই এই অবস্থার কারণ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “সেল নিয়ে মানুষের ধারণার একটা বড়সড় বদল ঘটেছে গত কয়েক বছরে।” কী রকম? গোকুলবাবু বলেন, “একটা সময় মানুষের ধারণা ছিল, সেলের বাজারে কম দামে বড় দোকানের ভাল জিনিস বিক্রি হয়। একটু দেখেশুনে দাম দর করে নিতে পারলেই বাজিমাত। কিন্তু ক্রমশ মানুষ বুঝতে শিখেছেন, সেল-এ বেচার জন্য সারা রাজ্য জুড়েই বিপুল পরিমাণে জিনিস তৈরি হয় এবং সেগুলি মোটেই বড় দোকানের কম দামে পাওয়া ভাল জিনিস নয়। ফলে ক্রমশ মানুষের সেল-এর প্রতি আগ্রহ কমছে।”
ব্যবসায়ীরা তাই মনে করেন, চৈত্রের সেল-এর সাফল্যই চৈত্রের সেল-এর ব্যর্থতার কারণ। ব্যবসায়ী রূপম বিশ্বাসের কথায়, “এক সময়ে সেল-এ এত বিক্রি হত যে, দামি জিনিস কম দামে ছাড়া একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তাই প্রায় বছর দশেক ধরেই সেল-এর বাজারের জন্য আলাদা করে জামা থেকে জুতো তৈরি করা হত স্থানীয় ভাবে। সস্তায় তাই বিকোতো।”
তা হলে এখন আর তা বিকোচ্ছে না কেন?
এই প্রশ্নে ব্যবসায়ীদের দু’রকম মত। এক পক্ষের মত, সময় এখনও যায়নি। শেষ সপ্তাহে সেল-এর বাজার জমবেই। আর এক পক্ষের মত, সেল-এর বাজার মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর বদলে বেশি নির্ভর করে গ্রামের ক্রেতার উপরে। গ্রামের ক্রেতার এ বার হাতে নগদ টাকা নেই। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “গ্রামের অনেক ক্রেতা সস্তায় জিনিসপত্র কিনতেই আসেন। তাঁরা দামি জিনিস সস্তায় পাবেন এমনটা ভাবেন না। এই বাজারে কেনাকেটার জন্য তাঁদের একটা বাজেটও থাকে। এ বার সেই টাকাটাই হাতে নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.