গ্রামে গ্রামে ব্যাঙ্ক নেই, হবে ‘আল্ট্রা স্মল ব্যাঙ্ক’
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য কিংবা একশো দিনের কাজের শ্রমিক, সকলেরই প্রয়োজন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। প্রয়োজনে ঋণ পেতে, হাতের টাকা জমাতে ব্যাঙ্কের দরকার তো বটেই, সরকারি নানা প্রকল্পের অনুদান বা মজুরিও এখন সরাসরি আসছে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের বহু গ্রামে এখনও ব্যাঙ্ক নেই। নিকটতম ব্যাঙ্ক ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে।
এমনই ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ব্যাঙ্ক পৌঁছে দিতে গত বছর থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ‘আল্ট্রা স্মল ব্যাঙ্ক’ পরিষেবা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। বীরভূমে তা শুরু হতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি, জানান ইউকো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। জেলায় ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৪২। এই জেলায় লিড ব্যাঙ্ক হচ্ছে ইউকো ব্যাঙ্ক। ওই ব্যাঙ্কের জেলা লিড ম্যানেজার ব্যোমকেশ রায় বলেন, “কিছু দিনের মধ্যেই খয়রাশোলের দু’টি ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হবে। আর অন্য দু’টিতে ‘ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট’ নিয়োগ করা হবে। আশা করছি, অন্য ব্যাঙ্কগুলিও দ্রুত একই পদক্ষেপ করবে।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে বলা হয়েছে, যে সব এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে পরিষেবা পৌঁছে দেবেন ‘ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট’ বা যোগাযোগকারী কর্মীরা। এঁরা এলাকায় গিয়ে মানুষের কাছ থেকে তাঁদের সঞ্চয় গ্রহণ করবেন, ঋণের আবেদন করবেন, আবেদন ব্যাঙ্ক থেকে অনুমোদন পেলে টাকাও পৌঁছে দেবেন। এই সব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র ওই কর্মীকে দেওয়া হবে। এ রকম আট-দশ জন কর্মীর জন্য, তাঁদের কাজের এলাকার তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে একটি অতি-ছোট ব্যাঙ্কের শাখা তৈরির কথা বলা হয়েছে। যেগুলি ওই সব কর্মী এবং মূল শাখার মাঝখানে সেতু হিসেবে কাজ করবে। অতি-ছোট শাখাগুলিতে এক জনই পুরো সময়ের কর্মী থাকবেন।
ব্যাঙ্কিং পরিষেবা
• ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট যে পরিষেবা দেন
• ঋণের আবেদন গ্রহণ করে গ্রাহকের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যগুলি যাচাই করা
• ব্যাঙ্কে নানা আবেদন জমা দেওয়া
• সঞ্চয়ের উপায়গুলি সম্পর্কে সকলকে জানানো
• স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সহায়তা
• স্বল্পমূল্যের সঞ্চয় গ্রহণ, স্বল্পমূল্যের ঋণ বিতরণ
ব্যাঙ্কের লেনদেনের সমস্ত নথি মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। নিরাপদে টাকা রাখারও ব্যবস্থা থাকবে। এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক না থাকায় অসুবিধায় পড়েন বীরভূমের পিছিয়ে পড়া ব্লকের অন্যতম খয়রাশোল ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত এলাকার সাধারণ মানুষ। বাবুইজোড়, হজরতপুর, নাকড়াকোন্দা এবং কেন্দ্রগড়িয়া এই চারটি এলাকায় না আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, না আছে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার জানালেন, ব্যাঙ্কের চাহিদা তীব্র। কিন্তু এখনও ব্যাঙ্ক পৌঁছয়নি এলাকায়।
ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। বাবুইজোড় পঞ্চায়েত এলাকাটি ব্লক থেকে কম বেশি ২০ কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তো বটেই, এমনকী পঞ্চায়েতের কাজ চালাতে বা বিভিন্ন সরকারি (কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের) প্রকল্পের টাকার লেনদেনের জন্য প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসা করতে হয় খয়রাশোলে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটিতে। পঞ্চায়েত প্রধান তাপস ঘোষ বলেন, “সামান্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের কাজের টাকা দেওয়ার জন্যও খয়রাশোলে গিয়ে ডাকঘরের নামে ড্রাফ্ট কাটাতে হয়। তার পরে শ্রমিকেরা টাকা পান। টাকা পেতে সময় লেগে যায়।” এলাকার সমস্ত স্বনির্ভর দলগুলির সদস্যদেরও নিয়মিত এতটা পথ পেরিয়ে খয়রাশোলে এসে ব্যাঙ্কের কাজ সারতে হয়।
আরও একটি ব্যাঙ্কহীন পঞ্চায়েত কেন্দ্রগড়িয়ার প্রধান, সিপিএমের দীপ্তি মণ্ডল বলেন, “কাছে-পিঠে ব্যাঙ্ক না থাকায় পঞ্চায়েতের কাজে অসুবিধা তো হয়ই। তা ছাড়া অতগুলো টাকা নিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে যাতায়াত করাটাও নিরাপদ নয়। আমাদের সমস্যা হলে সাধারণ মানুষের তো সমস্যা হবেই!” এলাকায় ব্যাঙ্ক থাকলে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ক কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখায় বলেও তাঁর যুক্তি। বিডিও জানাচ্ছেন, খয়রাশোল ব্লকের এক-একটি পঞ্চায়েত এলাকায় গড়ে ১০-১৫ হাজার মানুষের বাস। সেখানে মাত্র তিনটি এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। তিনটিতে রয়েছে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা। তাঁরও মত, “যে সব এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই, সেই এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা ও পঞ্চায়েতের কাজকর্মের কথা মাথায় রাখলে সমস্যা তো আছেই।”
‘আল্ট্রা স্মল ব্যাঙ্ক’ এই ধরনের সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারে। সরকারি ব্যাঙ্কগুলিই এই অতি-ছোট শাখাগুলি খুলবে। টাকার লেনদেনের অঙ্কটা অবশ্য সীমিত, এককালীন ২৫ হাজার টাকা থাকবে যোগাযোগকারী ব্যাঙ্ককর্মীর কাছে। “যদি আরও বেশি টাকার লেনদেনের প্রয়োজন হয়, তাহলে ওই কর্মী বেস ব্যাঙ্কের (যে শাখা থেকে তিনি আসছেন) সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তখন বাকি টাকার ব্যবস্থা করা হবে,” বলছেন ব্যোমকেশবাবু। কবে এমন সুযোগ আসবে, এখন তারই অপেক্ষায় তাপস ঘোষ, দীপ্তি মণ্ডলেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.