একই সঙ্গে পড়ল শেয়ার, টাকা এবং সোনার দাম। বুধবার সেনসেক্স পড়েছে ২৩৯.৩১ পয়েন্ট, টাকা ১৭ পয়সা এবং কলকাতায় পাকা সোনা প্রতি ১০ গ্রামে কমেছে ৩৬০ টাকা।
গত চার দিন মোট ৩৫৯.৫৩ পয়েন্ট ওঠার পর বুধবারই ফের পড়ল শেয়ার বাজার। লেনদেন বন্ধের সময়ে সেনসেক্স এসে দাঁড়ায় ১৮,৮০১.৬৪ অঙ্কে। টানা চার দিন উত্থানের প্রায় ৭০ শতাংশই এ দিনের পতনে মুছে গিয়েছে।
এ দিন শেয়ার ও টাকার দাম পড়ে যাওয়ার কারণগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই মিল দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, প্রধানত চলতি খাতে লেনদেনে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বাড়তে থাকার ফলেই টাকার দাম পড়তে শুরু করেছে। কারণ, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে ডলারের চাহিদা। রফতানির তুলনায় আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলেই বাড়ছে ডলারের চাহিদাও। কারণ, আমদানি করতে হয় ডলার খরচ করেই। মূলত এই কারণেই টাকার দাম গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এ দিন সব থেকে নীচে নেমে এসে বাড়িয়ে দিয়েছে ডলারের দাম। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই বাণিজ্য ঘাটতি দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের করুণ দিকটিই ক্রমশ তুলে ধরছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে শেয়ার বাজারের উপরেও।
শেয়ার দরের পতনের অন্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থার খারাপ আর্থিক ফলাফল। এ বার আগাম আয়কর আদায়ের পরিমাণ আগের বারের থেকে কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, গত বছর বাজেটে কর আদায়ের যে-লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, পরে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সংশোধিত লক্ষমাত্রাও পূরণ হয়নি। এই বিষয়টি বিশেষ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের ধারণা, কম কর আদায় শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থার খারাপ হালেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর ফলে ওই সব সংস্থার চলতি অর্থবর্ষের অন্তত প্রথম ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফলও আদৌ ভাল হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মনে।
সোনার দাম অবশ্য কমছে প্রধানত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার ফলেই। আমেরিকার আর্থিক অবস্থা ক্রমশ ভাল হতে থাকার কারণে সোনার পরিবর্তে বিদেশি মুদ্রা-সহ অন্য কিছু লগ্নির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বহর বাড়ছে বলে খবর। এর প্রভাবেই ভারতে সোনার দাম নেমে এসেছে গত দশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। তবে বিয়ের মরসুম শুরুর ঠিক আগে গয়নার বাজার ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে এর জেরে।
যে বিষয়টি শেয়ার বাজার এবং টাকার দামের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলছে তা হল, দেশের রাজনৈতিক চিত্র। কেন্দ্রে সরকার টিকে থাকার ব্যপারটি যে ভাবে অনিশ্চত হয়ে উঠেছে, তাতে এই মুহূর্তে শেয়ারে বিনিয়োগ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে। সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “পড়তি বাজারে ভাল শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করতে পারেন। কিন্তু যে-সব শেয়ারের দাম দ্রুত ওঠানামা করে, সেই সব শেয়ার কেনা থেকে আপাতত দূরে থাকাই শ্রেয়।” |