মিউচুয়াল ফান্ড নতুন ফান্ডে লগ্নির আগে

সুখবর। আপনাদের জন্য বাজারে আসছে অনেকগুলি নতুন মিউচুয়াল ফান্ড। বেশ কয়েকটি সম্পদ পরিচালনাকারী সংস্থা ওই সব পণ্য আনার প্রস্তাব দিয়েছে। এদের বেশির ভাগই আবার মাত্র ক’মাস আগে পা রেখেছে ভারতের বাজারে।
আপনাকে অবশ্য শুধুমাত্র কারা, কী ফান্ড নিয়ে বাজারে নামছে সেটা জানলে চলবে না। মাথায় রাখতে হবে কোন সূচকের কী বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে নতুন ফান্ডগুলি নিজেদের চরিত্র গড়ে তুলেছে। কারণ প্রতিটিরই নিজস্ব একটি সূচক থাকবে। যার আওতায় লেনদেন চলা শেয়ারে তহবিল ছড়িয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট ফান্ডটি। এবং সেই সূচকের গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতেই মাপা হবে ফান্ডের পারফর্ম্যান্স। কাজেই লগ্নির আগে সূচক ও ফান্ডের সেই সমীকরণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। আসলে আপনার উদ্দেশ্য স্রেফ লগ্নি করা নয়, বরং সেই লগ্নি নিংড়ে যতটা সম্ভব বেশি মুনাফা সিন্দুকে তোলা।

ফিরে দেখা
নতুন ফান্ডে লগ্নির জন্য নিজেকে তৈরি করতে সূচকের অর্থটা আগে স্পষ্ট জানা দরকার। কয়েক মাস আগেই এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা। তবু একবার পুরনো কথাগুলোই দ্রুত ঝালিয়ে নিচ্ছি।
সংক্ষেপে বললে, একগুচ্ছ শেয়ার নিয়ে তৈরি হয় এক একটি সূচক। তার আওতায় কেনা-বেচা চলে ওই সব শেয়ারের। নানা কারণে শেয়ারগুলির দাম বদলাতে থাকে প্রতিনিয়ত। কোনওটি বাড়ে। কোনওটি আবার কমে যায়। আর সেই অনুপাতে বাড়ে বা কমে সূচকটির মূল্য। অর্থাৎ সূচক পয়েন্ট অর্জন করে বা খোয়ায়। এক কথায় লগ্নির পারফর্ম্যান্স বিচার হয় সূচক মূল্যের এই ওঠা-পড়ার ভিত্তিতেই। পয়েন্ট বাড়লে লগ্নিকারীর লাভ। কমলে লোকসান।


তৈরি থাকুন
এ বার আপনার মাথায় নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন, একটি ফান্ডের চরিত্র, তার ভাল-মন্দ ইত্যাদি বুঝবেন কী করে? সেই জবাবটাই দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ভারতের সম্পদ পরিচালনার বাজারে নতুন সংস্থাগুলির তালিকায় আছে মোতিলাল অসওয়াল,
ইন্ডিয়া-ইনফোলাইন, ইন্ডিয়াবুল্স, ইউনিয়ন কেবিসি, এডেলওয়েজ ইত্যাদি। এদের অনেকেই নতুন পণ্য এনে বাজার দখলের ফন্দি এঁটেছে। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির কাছে সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি জমা দিয়েও দিয়েছে অনেকে।
এই রকমই একটি সংস্থার প্রস্তাবিত নতুন ফান্ডের কথা বলছি উদাহরণ হিসেবে। যাতে ‘তৈরি থাকার’ বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারেন আপনি।
ফান্ডের নাম: ইউনিয়ন কেবিসি ট্রিগার ৫০ ফান্ড-সিরিজ ওয়ান অ্যান্ড টু। এটি ক্লোজ এন্ডেড ইক্যুইটি ফান্ড। বেছে নিয়েছে ‘বিএসই মিডক্যাপ ইন্ডেক্স’ সূচকটিকে। লগ্নি করবে বাজারে শেয়ার মূলধনের বিচারে ছোট ও মাঝারি মাপের সংস্থায়। ফান্ড ভাঙাতে পারবেন তা কেনার দিন থেকে শুরু করে তিন বছর পর, নয়তো ফান্ডের ন্যাভ একটি নির্দিষ্ট সীমা পেরোলে। তবে বিষয়টি শর্তসাপেক্ষ।

বুঝে নিন: আপনি যদি এই ফান্ডে লগ্নির টাকা ঢালতে চান, তবে বিএসই মিডক্যাপ ইন্ডেক্সের উপরেই আপনাকে ভরসা রাখতে হবে। অর্থাৎ মেনে নিতে হবে যে, আপনার লগ্নির টাকা বড় বড় সংস্থার শেয়ারে খাটবে না। বরং বাজারে শেয়ার মূলধনের বিচারে যে-সব সংস্থা মাঝারি মাপের, তাদের মধ্যেই ছড়ানো থাকবে তহবিল। কারণ নাম থেকেই স্পষ্ট, এই সূচকের আওতায় ওই সংস্থার শেয়ারগুলিরই লেনদেন চলে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকটির চরিত্র হিসেবে সেই সংজ্ঞাই নথিবদ্ধ করা। এই বিষয়টি জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, বিএসই মিডক্যাপ ইন্ডেক্সের গতিপ্রকৃতির ভিত্তিতেই আপনি ইউনিয়ন কেবিসি ট্রিগার ৫০ ফান্ড-সিরিজ ওয়ান অ্যান্ড টু-র পারফর্ম্যান্স মাপতে বসবেন।

জেনে রাখুন: আপনি যদি ওপেন এন্ডেড ফান্ডের দিতে ঝোঁকেন, তা হলে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মাথা খাটিয়ে সূচক পছন্দ করা। কারণ কোন সূচককে মাপকাঠি করে আপনার ফান্ড এগোবে, সেটা খুব জরুরি। এমন যদি দেখা যায় যে, ফান্ডটি ধারাবাহিক ভাবে তার বেছে নেওয়া সূচকটির থেকে পিছিয়ে থাকছে, তা হলে আমি বলব এখনই ফান্ড ম্যানেজার বদলান। কারণ, ফান্ড ম্যানেজারই তো আপনার তহবিলকে ওই ফান্ডে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে তিনি ভাল কাজ করছেন না। যার মাসুল আগামী দিনে রিটার্ন পাওয়ার সময়ে আপনাকেই গুনতে হতে পারে। কাজেই এ রকম ঘটনা ঘটলেই বুঝবেন আপনার আর একটি ফান্ডে তহবিল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।
এত দিন যাঁরা আমার লেখা পড়ে এসেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, এখানে আমি অ্যাক্টিভলি-ম্যানেজড (সক্রিয় ভাবে পরিচালিত) ফান্ডের কথা বলেছি। এই ফান্ড তার বেছে নেওয়া সূচকের আওতায় থাকা বিভিন্ন শেয়ারে লগ্নিকারীর তহবিল এমন ভাবে ছড়িয়ে রাখে, যাতে তাদের সম্মিলিত মুনাফা সূচকের লাভকেও ছাপিয়ে যায়। আর সেটাই ফান্ড ম্যানেজারের চ্যালেঞ্জ।

চেনা নাম, অপরিচিত তথ্য
সেনসেক্স ও নিফ্টি। লগ্নিকারীদের কাছে খুব চেনা এই দু’টি নাম। শেয়ার বাজার সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা যাঁদের আছে, তাঁরা অবশ্যই জানবেন, বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দু’টি সূচক যথাক্রমে এই সেনসেক্স ও নিফ্টি। ভারতের সব থেকে জনপ্রিয় দু’টি সূচক।
কিন্তু লগ্নিকারীদের আরও কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। সেগুলি হল
• দু’টি সূচকের আওতাতেই বিভিন্ন ধরনের সংস্থার শেয়ার রয়েছে (ওয়েল ডাইভার্সিফায়েড)। আর বিভিন্ন ধরনের শেয়ার থাকার কারণেই বড় পরিসরে বাজারের পরিস্থিতিটা ভাল ভাবে ধরা পড়ে তাদের উত্থান-পতনে।
• সেনসেক্স তৈরি ৩০টি সংস্থার শেয়ার নিয়ে।
• নিফ্টি ৫০টি সংস্থার শেয়ার নিয়ে।
• দু’টিতেই এমন সব শেয়ার রয়েছে, যেগুলির চাহিদা খুব বেশি। ফলে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হতে থাকে (লিকুইড)। সেই কারণেই লেনদেনের পরিমাণ খুব বেশি হতে দেখা যায় তাদের আওতায়।
• সূচকগুলি খুব সক্রিয় ভাবে পরিচালনা করা হয়। কোনও সংস্থার শেয়ার বাজারের নির্দিষ্ট শর্ত না-মানতে পারলে সেটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে স্থান পূর্ণ করে অন্য সংস্থার শেয়ার।
• লগ্নিকারীকে নিজের তহবিল সুরক্ষিত রাখার স্বার্থেই নিয়মিত এই ধরনের পরিবর্তন খেয়াল করতে হয়।

নজর থাকুক বিশ্ব জুড়ে
বিশ্বায়নের যুগে কোনও কিছুই আর দেশের চার সীমান্তে আটকে থাকে না। মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিও নয়। তাই দেশের অতি সাধারণ লগ্নিকারীকেও পরিষ্কার ভাবে বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক সূচকগুলি। নজর রাখতে হবে তাদের গতিপ্রকৃতিতে। কারণ, যে-সমস্ত নতুন ফান্ড বাজারে আসবে, তাদের অনেকেই বিদেশের বাজার দখলের লক্ষ্যে এগোবে। যেমন, এইচএসবিসি রাশিয়া ইক্যুইটি ফান্ড, রিলায়্যান্স ইউএস ইক্যুইটি অপরচুনিটি ফান্ড, ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটন ইন্ডিয়া ফিডার- এশিয়ান লাতিন-আমেরিকা ফান্ড, জেপি মর্গ্যান ইউএস গ্রোথ ইক্যুইটি অফশোর ফান্ড ইত্যাদি।
এরা কোনও না কোনও আন্তর্জাতিক সূচককে মাপকাঠি হিসেবে বেছে নেবে। যেমন, জেপি মর্গ্যান ফান্ডের পারফর্ম্যান্স বিচার হবে রাসেল ১০০০ গ্রোথ ইনডেক্স-এর ভিত্তিতে। এইচএসবিসি রাশিয়া ইক্যুইটি ফান্ড মর্গা্যান স্ট্যানলির এমএসসিআই রাশিয়া ইনডেক্স-কে।

জনপ্রিয় নয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ
ভিড়ে এমন অনেকেই থাকে, যারা তেমন জনপ্রিয় না-হলেও, তাদের উপস্থিতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু ফান্ডকে দেখা যাবে তাদের মাপকাঠি হিসেবে এমনই কয়েকটি সূচককে বেছে নিতে। আমি এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু সেক্টর ফান্ড বা শিল্প ভিত্তিক ফান্ডের কথাই বলছি। তারা ভোগ্যপণ্য, ওষুধ, প্রযুক্তি, ও ব্যাঙ্কিং শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে। ঘটনাচক্রে গত এক বছরে এফএমসিজি ফান্ডগুলিকে যে-কোনও ইক্যুইটি ফান্ডকেই টেক্কা দিতে দেখা গিয়েছে। তাদের গড় আয় ছিল বেশ ভাল, ৩১% (২৪ মার্চ ২০১৩)।
আমি কিন্তু কোনও বিশেষ ফান্ডের পক্ষপাতিত্ব করছি না। শুধু বলছি ডায়ভার্সিফায়েড ফান্ডের থেকে সেক্টর ফান্ডে ঝুঁকি বেশি। কিন্তু কিছু লগ্নিকারী তা পছন্দ করেন। আগামী দিনে ফার্মা ও এফএমসিজির মতো শিল্প আরও ভাল ফল করলে এগুলিতে লগ্নি করে, এমন সেক্টর ফান্ডের কদর বাড়বে। লগ্নিকারীরা সে দিনের জন্য তৈরি থাকুন।
প্রস্তাবিত নয়া ফান্ড
সেবির কাছে খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে যে ফান্ডগুলি, তার মধ্যে কয়েকটি হল
• আইএনজি ফরওয়ার্ড পি/ই রেশিও ফান্ড
• পিপিএফএএস লং টার্ম ইক্যুইটি ফান্ড
• আইআইএফএল সেনসেক্স ফান্ড
• মোতিলাল অসওয়াল প্রাইম ইক্যুইটি ফান্ড
• সুন্দরম সিলেক্ট মাইক্রো ক্যাপ ফান্ড
• এইচএসবিসি এশিয়া প্যাসিফিক (এক্স জাপান) ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ড

লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর (মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.