নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
বধূ মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হলেন এক এএসআই। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে ময়ূরেশ্বর থানার আম্বা গ্রামে। জখম মল্লারপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই এনামুল করিমকে ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থা বুঝে বুধবার তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “অগ্নিদগ্ধ বধূর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বধূর জা ও দেওরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে।” তিনি জানান, তবে পুলিশকর্মীকে কেন মারা হল তা পরিষ্কার নয়। পুলিশকে মারধরের জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মুনাই ঘটক (২২) নামে ওই বধূকে রামপুরহাট থেকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় বর্ধমানে তিনি মারা যান। দেওর ও জা তাঁকে পুড়িয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ ওঠে। বর্ধমানে ময়না তদন্তের পরে মঙ্গলবার দেহ নিয়ে গ্রামে পৌঁছন বাপেরবাড়ি ও এলাকার লোকজন। এর পরেই তাঁরা শ্বশুরবাড়ির সামনে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। উত্তেজনার খবর পেয়ে এএসআই এনামুল করিম তিন পুলিশকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এএসআই বলেন, “পরিস্থিতি খারাপ ছিল। শ’চারেক জনতা অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছিলেন। অভিযোগ না পেলে কিংবা মহিলা পুলিশ না থাকলে তাঁদের ওই মুহূর্তে ধরা সম্ভব নয় বলে আমি তাঁদের বোঝাতে থাকি। রাত ৯টা নাগাদ অভিযোগ পেয়ে বধূর শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে জাকে গাড়িতে তোলার আগে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। তবে তাঁদের কোনও ভাবে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।” তাঁর দাবি, “এরই মধ্যে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন জনতা। ভয়ে চালক ও অন্যান্য পুলিশকর্মী গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। আমি একা পড়ে যাই। তখন এলাকার লোকজন ধাওয়া করছে দেখে আমি ছুটতে ছুটতে পড়ে যাই। তখন ইটের আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। হাতও ভেঙে গিয়েছে। পরবর্তীতে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, মল্লারপুর নিমতলার কাছে একটি মোটরবাইকে চেপে হাসপাতালে পৌঁছই।”
এ দিকে, রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃতার দেওর ভুটু ঘটক দাবি করেন, “বৌদি রান্না করছিলেন। আচমকা আমার নাম ধরে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেন। গিয়ে দেখি বৌদির গায়ে আগুন লেগেছে। বাঁচাতে গেলে আমাকে ঠেলে তিনি বাইরে বেরিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন। এলাকার লোকজন বৌদি ও আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কেন আগুন ধরাতে যাব।” মৃতার স্বামী রাজু ঘটক বলেন, “ঘটনার কথা জানতে পেরে বাড়ি ফিরে দেখি স্ত্রী পুকুরের জলে। কী করে এমন হল বুঝতে পারছি না।” |