নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
আগামী শিক্ষাবর্ষেই পঠনপাঠন শুরু হতে চলেছে সদ্য গঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পঠনপাঠন শুরুর জন্য আসানসোলে একটি নতুন ভবনেরও ব্যবস্থা করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। রেজিস্ট্রার নিয়োগ করে নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানোর প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।
বছর খানেক আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এর জন্য প্রায় ছ’মাস আগে একজন উপাচার্যও নিয়োগ করা হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১০ জানুয়ারি আসানসোলে এসে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাসও করেন। উচ্চশিক্ষা দফতরও আগামী শিক্ষাবর্ষেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরুর কথা জানায়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ভবন নিয়ে। প্রশ্ন ওঠে, ছাত্রছাত্রীরা কোথায় বসে পড়াশোনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য জমি পাওয়া গেলেও এত অল্প সময়ে ভবন তৈরি করা সম্ভব ছিল না। অবস্থা সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসানসোলের তিনটি কলেজের কাছে তাঁদের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করতে চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া না মেলায় পৃথক একটি ভবন খুঁজতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশেষে আসানসোলের সুকান্ত ময়দানে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা রাজ্য সরকারের অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের একটি তিনতলা ভবনের খোঁজ মেলে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায় বলেন, “উচ্চশিক্ষা দফতরের অনুরোধে অনগ্রসর কল্যাণ দফতর এই ভবনটি আমাদের ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। জুন মাস থেকে সেখানেই নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন শুরু হবে।” |
আসানসোলের মহকুমাশাসক শিল্পাগৌরী জানিয়েছেন, এডিডিএ কর্তৃপক্ষ এই ভবনটি সংস্কার করে দিচ্ছে। এপ্রিল মাসেই ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
তবে এই ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এলাকার আদিবাসী ও অনগ্রসর জনজাতি সংগঠনগুলি। এই ধরনের একাধিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত মহকুমা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক মোতিলাল সোরেনের অভিযোগ, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেল বানাতে এই ভবনটি তৈরি হয়। কিন্তু সরকারি নীতির ভুলে সেটি চালু হয়নি। মোতিলালবাবু বলেন, “এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক একটি হস্টেল বানানো না হলে আমরা আন্দোলন করব।” মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনগ্রসর কল্যাণ দফতর প্রায় ১৫ বছর আগে ৩৫টি ঘর বিশিষ্ট এই তিনতলা ভবনটি বানিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ১৩ এপ্রিল তৎকালীন রাজ্য সরকারের অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী উপেন কিস্কু ভবনটির দ্বারোদঘাটন করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে একদিনের জন্যও হস্টেলের তালা খোলেনি। ফলে ভবনটি কার্যত দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল।
উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়ের মতে, এখন ভবনটি সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু করার উদ্যোগে কোনও বাধা আসা উচিত নয়। তিনি জানান, চারটি বিষয়ে এই শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পড়ানো হবে। বিষয়গুলি হল ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস ও অঙ্ক। পড়ানোর জন্য ২৮ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিযুক্ত হয়েছেন। বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া এই চার জেলাকে নিয়ে একটি বিশেষ ভৌগলিক মানচিত্র বানিয়ে তার অন্তর্গত ৩৪টি কলেজকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। |