তুলাই পাঞ্জি, কালো নুনিয়া— উত্তরের দুই প্রজাতির সুগন্ধী চালের সুনাম রয়েছে। এ বার সুস্বাদু মুড়ি তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ নাগেশ্বরী প্রজাতির ধানের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্যোগী হল কৃষি দফতর। ফার্মার্স ক্লাবের মাধ্যমে ওই চালের মুড়ির নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তৈরি করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। কৃষি কর্তারা মনে করছেন এটা সম্ভব হলে ওই ধান চাষ বাড়বে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালোনুনিয়ার মতো নাগেশ্বরীও উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি মহকুমা, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের কিছু এলাকায় চাষ হয়। বিশেষ গন্ধ যুক্ত ওই ধানের চালে জলীয় অংশ কম থাকে। চাল ভেজে যে মুড়ি পাওয়া যায় সেটা বেশ ফুলে ওঠে। স্বাদেও ভিন্ন ধরনের। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধান গবেষক অশোক সাহা বলেন, “মূলত মুড়ির জন্য স্থানীয় প্রজাতির ওই ধান বিখ্যাত। মাটির হাড়িতে যারা মুড়ি ভাজার কাজ করতেন তাঁদের কাছে ওই ধানের কদর বেশি ছিল।”
স্বাদ ও গন্ধের জন্য বাজারে চাহিদা ভাল নাগেশ্বরী মুড়ির। কিন্তু অন্য ধানের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। ওই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নাগেশ্বরীর মুড়ির নাম করে অন্য চালের মুড়ি বিক্রি করতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে নাগেশ্বরী মুড়ি সম্পর্কে ক্রেতাদের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। ওই সমস্যা মেটাতে নাগেশ্বরী চালের মুড়ির নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি দফতর। জলপাইগুড়ির উপ কৃষি অধিকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “ব্র্যান্ড তৈরি করা সম্ভব হলে ধানের চাষ বাড়বে। শ্রী পদ্ধতিতে নাগেশ্বরীর উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।”
কৃষি আধিকারিকরা জানান, উত্তর দিনাজপুরের চোপরা, শিলিগুড়ি মহকুমার খরিবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া এবং জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ এলাকার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে নাগেশ্বরী ধানের চাষ হয়। জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি দফতরের সিনিয়ার টেকনিক্যাল অফিসার সুজিত পাল জানান, এক বিঘা জমি চাষ করে অন্য ধান ১৮ মন পাওয়া গেলেও ওই ধান হয় ৮ মন থেকে ১০ মন। ওই কারণে চাষিরা খুব একটা উৎসাহ দেখায় না। কিন্তু উৎপাদন কম হলেও দাম বেশি। তাই লোকসানের সম্ভাবনা নেই বলে কৃষি আধিকারিকদের দাবি। বরং তাঁরা মনে করেন উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় নাগেশ্বরী ধান চাষ করে লাভের সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে।
খরিবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লক কৃষি আধিকারিক মেহফুজ আহমেদ, “নাগেশ্বরী মুড়ির মানরক্ষার পাশাপাশি ধানের প্রজাতিকে রক্ষার জন্য ৫৮টি ফার্মার্স ক্লাবকে দিয়ে ব্র্যান্ড তৈরির চেষ্টা চলছে। এটা করা সম্ভব হলে ওই ধানের চাষ বাড়বে। বাজারে ভাল মানের মুড়ির জোগান বাড়ানো সম্ভব হবে।” বর্ষাকালে নাগেশ্বরীর চাষ হয়ে থাকে। অন্য ধানের মতো দেখতে হলেও বেশ লম্বা। চারা থেকে ধান হতে সময় লাগে চার-পাঁচ মাস। সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরেও ওই ধানের চাষ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি দফতর। কৃষি আধিকারিক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেন, “ভাল মুড়ির জন্য বাইরের বীজ এনে জেলায় ওই ধান চাষের চেষ্টা করছি।” |