ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই, ছোট এজলাস।
কিন্তু মামলাটি এমন যে, সওয়াল শুনতে ভিড় জমিয়েছিলেন নানা স্তরের আইনজীবী, আইনের পড়ুয়া, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ, অন্যান্য মামলার সূত্রে আদালতে আসা লোকজন এবং অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মীরা। তাঁদের সমবেত কৌতূহলের বিষয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকারের মামলা।
কিন্তু ঘরটা যে বড্ড ছোট। মামলা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই সেই এজলাসে তিলধারণের জায়গা নেই। কিন্তু লোক আসারও যে বিরাম নেই! বেগতিক দেখে এক সময় দরজা বন্ধই করে দিল পুলিশ। বাইরের বারান্দায় তখন জায়গা দখলের মরিয়া ঠেলাঠেলি। আর হাঁসফাঁস করছে ভিতরের ভিড়।
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের তেতলার ২৩ নম্বর ঘরটিকে ঘিরেই এই ভিড়ভাড়াক্কা। কারণ ওই ঘরেই বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের এজলাসে ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকারের মামলার শুনানি। শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ৩টেয়। কিন্তু বেলা ২টোতেই দেখা গেল, বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঘরের দরজা। সেখানে মোতায়েন পুলিশকর্মী। |
পঞ্চায়েত মামলার শুনানির সময় হাইকোর্ট চত্বরে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র |
ঘর বন্ধ কেন?
ভিতরে জায়গা নেই যে! তাই আর কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। শুনেই হতাশ বারান্দার ভিড়। কিছুটা ক্ষুব্ধও অনেকে। আগেভাগে যাঁরা ঘরে জায়গা নিয়েছিলেন, স্বস্তিতে নেই তাঁরাও। সেখানেও তখন আইনজীবী, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং উৎসাহী রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এই মামলার আইনজীবীরা তখনও আসেননি। এই ভিড় ঠেলে তাঁরা কী ভাবে এজলাসে ঢুকবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল পুলিশ। অবশেষে এক-এক করে ঘরের সামনে এলেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল, রাজ্য সরকারের আইনজীবী শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়, অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় এবং মামলার অন্য আইনজীবীরা। প্রতি বারেই তাঁদের দেখে নড়েচড়ে উঠছিল এজলাসের বাইরের ভিড়টা। বাড়ছিল গুঞ্জন। দু’পক্ষের আইনজীবীদেরই ভিতরে ঢুকতে বেগ পেতে হল বিস্তর।
কারণ ভিড়ের অনেকেই ওই আইনজীবীদের সঙ্গে ঢুকে পড়তে চাইছিলেন এজলাসে। ঠেলাঠেলি বেড়ে যাচ্ছিল। পুলিশ অবশ্য আটকে দিল উৎসাহীদের। ভিড় ঠেলে দুই শিবিরের আইনজীবীদের এজলাসে পৌঁছনোর পথ করে দিল তারাই।
বেলা ৩টেয় শুরু হল সমরাদিত্যবাবুর সওয়াল। তখনও বিপত্তি। যাঁরা ঢুকতে পেরেছিলেন, তাঁদের সকলেই সামনে এগিয়ে শুনতে চাইছিলেন তাঁর কথা। ফের এক দফা ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায় এজলাসে। একটা কথাও যেন বাদ পড়ে না-যায়! শেষ পর্যন্ত ঠেলাঠেলিটা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সাময়িক ভাবে শুনানিই বন্ধ করে দিতে হল।
বিষয়টি নজর এড়ায়নি বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের। কমিশন-সরকার দ্বৈরথ তুঙ্গে ওঠার পরিণামেই এই মামলা। আর সেই জন্যই এত আগ্রহ জনতার। এত ছোট ঘরে সেই কৌতূহলী ভিড়কে জায়গা করে দেওয়া মুশকিল। তাই এ দিনের শুনানির শেষে বিচারপতি জানিয়ে দেন, আর এ ঘরে নয়। বৃহস্পতিবার মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বড় ঘরে।
কোনও মামলাকে ঘিরে এমন হামলে পড়া ভিড় শেষ কবে দেখেছে হাইকোর্ট? এজলাসের ভিতরে ও বাইরে এ দিনের ভিড় সিঙ্গুর মামলার প্রথম শুনানির দিনটা (২০১১ সালের ২২ জুন) মনে করিয়ে দিচ্ছিল আইনজীবীদের।
এক আইনজীবী বলেন, “সে-দিন মামলাটি ছিল টাটা মোটরস আর রাজ্য সরকারের মধ্যে। এবং টাটা মোটরসের তরফে সওয়াল করেছিলেন সমরাদিত্য পালই। বিচারপতি ছিলেন সৌমিত্র পাল। তাঁর এজলাসে ভিড় হয়েছিল এমনই।” |