বালিগঞ্জের ‘বস’ কি মামাদৌ ল্যামিনের কলকাতা সংস্করণ? এ বারের আইপিএল-এ তিনিই কি গত বারের চ্যাম্পিয়ন নাইটদের নতুন অনুপ্রেরণা হতে চলেছেন? কেকেআর মালিক শাহরুখ খান যে মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় সেই ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন!
না হলে ‘কিং খান’ কেনই বা তাঁর মোবাইল নম্বর আপ্ত সহায়ক করুণাকে রেখে দিতে বলবেন? কেনই বা ‘বস’কে বললেন, “ছেলেদের মিটিংয়ে এক দিন তোমাকে থাকতেই হবে। তুমি কথা বললে ওদের জোশ বাড়বেই বাড়বে।” আর শাহরুখের সামনে থাকা লক্ষ্মী, সামি, ইকবাল আবদুল্লার সামনে অস্পষ্ট উচ্চারণে বসের প্রথম দিনের ‘ভোকাল টনিক’, “২০০৮ থেকে তোমাদের জন্য মাঠে যাই। এ বারও যাব। তোমাদের আবার চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। গো কেকেআর, গো...।”
কে এই ‘মামাদৌ’? আর কে-ই বা এই ‘বস’? সেনেগালের ছোট্ট ছেলে মামাদৌ বার্সেলোনা অন্ত প্রাণ। কিন্তু জন্মান্ধ। গত মাসে বাবার হাত ধরে হাজির হয়ে গিয়েছিল ন্যু কাম্পে মেসিদের অনুশীলনে। অবিশ্বাস্য ভাবে স্রেফ স্পর্শ করেই ছোট্ট মামাদৌ সে দিন নাম বলে দিয়েছিল কার্লোস পুয়োল, মেসি, আবিদালদের। যা দেখে মেসি অবাক বিস্ময়ে বলেছিলেন, “ভাল খেলার ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে দিল মামাদৌ।” |
হোটেলে শাহরুখ ও নাইটদের সঙ্গে হরশূল। মঙ্গলবার। |
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব কলকাতার সাত তারা হোটেলেও প্রায় একই ছবি। তফাত একটাই, মামাদৌ ফুটবল ভক্ত। আর রোল্যান্ড রোডের হরশূল গোয়েঙ্কা ওরফে ‘বস’ মন প্রাণ সঁপে দিয়েছেন ক্রিকেট এবং শাহরুখ খানকে। সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত হরশূল এ দিন দুপুরে মা রজনীর হাত ধরে হুইল চেয়ারে চেপে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন নাইটদের টিম হোটেলে। উদ্দেশ্য, শাহরুখের সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু ত্রিস্তর নিরাপত্তা-বেষ্টনী টপকানো যাচ্ছিল না কিছুতেই। শেষ পর্যন্ত ‘রেড চিলিজ’-এর দুই কর্ত্রী করুণা এবং মাণ্ডবী হরশূলদের ইতস্তত ঘুরে বেড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বসের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। তাঁরাই হোটেলের স্যুটে বিশ্রামরত শাহরুখকে খবর দেন এই গুণমুগ্ধের কথা জানিয়ে। খবর পেয়েই হরশূলকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেন শাহরুখ। সঙ্গে নাইট মালিক এটাও মনে করিয়ে দেন, মঙ্গলবার বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস।
করুণাদের সঙ্গে শাহরুখের ঘরে গিয়েই বাদশাহকে জড়িয়ে ধরেন ২১ বছরের হরশূল। অস্পষ্ট উচ্চারণে বলেন, “শাহরুখ, আই লাভ ইউ অ্যান্ড ইওর কেকেআর।” মায়ের কাছ থেকে হরশূলের ডাক নাম বস শুনেই হাসিতে ফেটে পড়েন শাহরুখ। বলেন, “আই লাভ ইউ টু, বস।” হরশূলের মুখ থেকে নাইটদের বিগত বছরের যাবতীয় পরিসংখ্যান শুনেই চোখ গোলগোল হয়ে যায় বাদশা খানের। এর পর মিনিট দশেকের আড্ডা। তারই ফাঁকে নাইট মালিক বলে বসেন, “হরশূলদের দেখলে লড়াই করার ইচ্ছে বেড়ে যায়।”
স্বপ্নের নায়কের ঘর থেকে যখন হরশূল বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁর মুখে হাইভোল্টেজ হাসি। মুখে উচ্ছ্বাসের অভিব্যক্তি, “স্বপ্ন সফল হল। করুণাকে ধন্যবাদ।” পাশে দাঁড়ানো করুণা তখন হরশূলের ঠিকানা নিতে ব্যস্ত। বললেন, “কিছুই করিনি। এ রকম সমর্থক পাওয়াটা বেশ গর্বের।”
গর্বের সমর্থক ‘বস’ গম্ভীরদের বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ করাবেন? খেতাব শহরে রাখতে মানসিক ভাবে কতটা সাহায্য করতে পারবেন? উত্তর জানতে আপাতত গুণতে হবে প্রহর।
|