গতানুগতিক ভিড়টা আজ দিক পাল্টেছে। রেড রোডের গায়ে মহমেডান মাঠের কাউন্টারটা কেমন যেন ফাঁকা-ফাঁকা। প্রখর গ্রীষ্মের দুপুরে আড়মোড়া ভাঙছে ঘোড়সওয়ার পুলিশ। হাই তুলছে বাদামওয়ালা।
সাপের মতো একেঁবেকে লাইনটা বরং বেলেঘাটার দিকে। উদ্বোধন সন্ধেয়, কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার। চড়া রোদকে তুড়িতে উড়িয়ে অগুনতি কালো মাথা। মুখে বেগুনি-সোনালি রং, হাতে নাইটদের খুলি আঁকা ফ্ল্যাগ নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ঘর্মাক্ত যুবক। ভ্রূক্ষেপহীন।
শহরের দুই প্রান্ত। দুই স্টেশন। দুই স্টেডিয়াম। অদ্ভুত বৈপরীত্য, অথচ বড়ই প্রাসঙ্গিক।
যুবভারতী মত্ত। ইডেন নিঝুম।
মঙ্গলের মোহিনী সন্ধেয় শহরের ক্রিকেট-আকাশে আতসবাজির রং ধরাল যুবভারতী। আইপিএল উদ্বোধনে দুনিয়াকাঁপানো অধিনায়ক সমাগমে।
ক্রিকেটের নন্দনকাননের আকাশের রং ততক্ষণে ধূসর। দিল্লি টিমে মর্নি মর্কেল নেই। কেভিন পিটারসেন নেই। জেসি রাইডার নেই। আইপিএলের বর্তমান শাসক টিম কেকেআরের বিরুদ্ধে তা হলে ডেয়ারডেভিল দস্যু বলতে আর রইল কে? কালিস-গম্ভীরের বিরুদ্ধে লড়বেটা কে? এ তো বল পড়ার আগেই ম্যাচ একপেশে।
এবং গতানুগতিক যুদ্ধটাও সম্ভবত নেই।
গত দু’বছরে ইডেনে কলকাতা বনাম দিল্লি মানে ছিল, বীরু বনাম গোতি। দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধুর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। বর্তমান প্রেক্ষাপট তো আরও বেশি লোভনীয়, অনেক বেশি জিভে জল আনার মতো। টেস্ট টিম থেকে সহবাগ-গম্ভীর— পোড়খাওয়া দুই সিনিয়র একসঙ্গে বাদ। প্রত্যাবর্তনের পাটাতনের নাম আইপিএল। আর সেখানে দুই আহত সিংহের সম্মুখসমর দেখতে কার না ভাল লাগে?
গৌতম গম্ভীর থাকছেন। কিন্তু বীরেন্দ্র সহবাগ হয়তো না। |
নাইটদের বিদেশি তাস |
|
|
|
লি-নারিন-কালিস। মঙ্গলবার ইডেনে। ছবি: উৎপল সরকার |
|
‘যদি, ‘কিন্তু’, ‘হয়তো’ শব্দবন্ধগুলো রাখতে হচ্ছে ভদ্রলোকের নাম সহবাগ বলেই। কে জানে, কখন আবার এসে উপস্থিত হবেন! দিল্লি টিম ম্যানেজমেন্ট সোমবার পর্যন্ত বলার চেষ্টা করছিল যে, একেবারে ‘লাস্ট আওয়ারে’ এসে যেতে পারেন সহবাগ। কিন্তু সে আশায় আপাতত গুড়ে বালি! রাত পর্যন্ত বীরু শহরে ঢুকেছেন বলে খবর নেই। এবং প্রশ্ন উঠলে দিল্লি কোচ এরিক সিমন্স থেকে টিম মেন্টর টি এ শেখর— এমন আমতা-আমতা করছেন যেন দিল্লির যন্তরমন্তরে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে!
ভিন্ন মত, ভিন্ন আত্মপক্ষ সমর্থনের মেজাজ। সিমন্স কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলছিলেন, “কী জানি। আসবে হয়তো কোনও একটা সময়। বলতে পারছি না।” টিম মেন্টর আবার বলার চেষ্টা করলেন, বীরুর কোমরে চোট। দিল্লির ক্রিকেটমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চোট একটা পিঠে আছে বটে, তবে তা বিশেষ গুরুতর নয়। দিব্য নাকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। তা হলে? ক্যাপ্টেন্সির তাজ আর নেই বলে আসছেন না? জল্পনা কিন্তু উড়ছে।
আর উল্টো দিকে এমন নির্বিষ, হাড়গোড় ভাঙা প্রতিপক্ষ পেলে বিপক্ষ অধিনায়কের যা শরীরীভাষা হওয়া উচিত, গম্ভীরেরও হচ্ছে। নেটের ব্যাটিং-স্ফুলিঙ্গ ঠিকরে বেরোচ্ছে চোখেমুখে। পারলে এখনই নেমে পড়েন দিল্লি-নিধনে। এবং নেটে ইকবাল আবদুল্লাহদের যে ভঙ্গিমায় বারবার ওড়ালেন, ঠিক একই রকম ভাবে তিনটে প্রশ্নে মাঠের বাইরে ফেলে দিলেন সাংবাদিকদের।
প্রসঙ্গ জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন: “ও সব আমি ভাবি না। বরং আইপিএল জয়ী টিম হিসেবে নিজেদের দেখছি। আমি কেকেআরের হয়ে খেলি। যারা শেষ আইপিএলটা জিতেছে।”
প্রসঙ্গ চ্যাম্পিয়নের চাপ: “কীসের চাপ? বাড়তি আত্মবিশ্বাস বলুন। আমরা নামার জন্য প্রস্তুত।”
প্রসঙ্গ অতীতের কেকেআর: “কেকেআর বরাবরই মাঠের মতো মাঠের বাইরেও জনপ্রিয়। তবে এখন সময় হয়েছে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার।”
গম্ভীর ‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট’-এর কথা বলতেই পারেন। বিপক্ষে মহাশক্তি বলতে শুধু মাহেলা জয়বর্ধনে, ধারে-ভারে নাইটরা কয়েক মাইল এগিয়ে। গম্ভীর নাকি শুধু ধোঁয়াশায় টিম কম্বিনেশন নিয়ে। ইডেনের পিচ এ বার আর গত পাঁচ বছরের মতো নয়। আনকোরা। সবুজ একটা ভাবও আছে। পিচ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “গুড টি-টোয়েন্টি উইকেট। বল ব্যাটে আসবে ভাল।” চূড়ান্ত টিম এখনও হয়নি। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম নেই। তিন বিদেশির স্লট নিশ্চিত। জাক কালিস, ব্রেট লি এবং সুনীল নারিন। চতুর্থ বিদেশি কে, সেটাই প্রশ্ন। শোনা যাচ্ছে ইয়ন মর্গ্যান কিংবা ‘আননোন ফ্যাক্টর’ সচিত্র সেনানায়কে। আর ভারতীয় ব্রিগেড? ইউসুফ পাঠান, মনোজ তিওয়ারি, মনবিন্দর বিসলা এঁরা থাকছেন। অলরাউন্ডার হিসেবে লক্ষ্মীরতন শুক্ল না রজত ভাটিয়া, ঠিক নেই। লক্ষ্মী বলে রাখলেন, “খেললাম কী খেললাম না, সেটা বড় নয়। স্পিরিট একই থাকবে।”
শুনলে একটা যোগসূত্রের খোঁজও পাওয়া যাবে। নাইটদের নতুন মন্ত্রও তো তাই। ওয়েবসাইট খুললেই চোখে পড়ে: ‘ওয়ান টিম। ওয়ান প্লেজ।’ টিম এক। জয়মন্ত্র এক। শপথবাক্যও এক।
পরিবর্তনের এই নাইট সংসারে ব্যতিক্রমের কোনও জায়গা নেই!
|
মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির পাড়ে |
আজ ইডেনে হাজির থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শোনা যাচ্ছে তিনি যে শাড়ি পরবেন তার পাড়ে নাইটদের জার্সির রঙ থাকবে।
|
ইডেনে অক্ষয়কুমার |
তাঁদের নতুন ছবির প্রচারের জন্য আইপিএল সিক্সের উদ্বোধনী ম্যাচে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস বক্সে থাকতে চলেছেন স্ত্রী টুইঙ্কলের সঙ্গে অক্ষয়কুমার। থাকবেন সোনাক্ষী সিংহ এবং ইমরান খানও।
|
তারকাদের খানাপিনা |
• ক্যাটরিনা কাইফ — গরম পরিজ, নানা ধরনের রুটি, অরেঞ্জ জুস
• দীপিকা পাড়ুকোন —অ্যান্ড টিম প্যাকড্ ফুড, ভেজ ক্লিয়ার সুপ, চিকেন ক্লিয়ার সুপ, ম্যাশড্ পোটেটো, চিকেন স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ
• শাহরুখ খান — কাবাব, স্যান্ডউইচ |
(মঙ্গলবারে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের আগে হোটেলে) |
|