বাদশাহি মেজাজেই শুরু আইপিএল
রাত ন’টা। যুবভারতীর আকাশ থেকে আতসবাজির রোশনাই পুরো মিলিয়ে যায়নি। টুকরো-টুকরো আলোর বিন্দু উপরে তাকালেই চোখে পড়ছে। আশপাশ থেকে কানে আসছে অস্ফুট কিছু মন্তব্য, অপার মুগ্ধতার কিছু অভিব্যক্তি।
“...অসাম। পিটবুলের তো প্রেমে পড়ে গেলাম।”
“বয়স হলেও এসআরকে, এসআরকেই থাকবে। ক্যাটরিনাকে পাঁচ গোল দিল।”
“কোনও কথা হবে না। এমন জিনিস দেখেনি কলকাতা। আর দেখবেও না।”
‘মাদার অব অল শো’-জ।
মঙ্গলের যুবভারতী-সন্ধের এটাই ক্যাচলাইন ছিল না? একই মঞ্চে, একই প্রেক্ষাপটে হাতে হাত ধরে যেখানে পাশাপাশি হাঁটবে ভারতীয় ক্রিকেট এবং বিনোদনের বিশ্ব। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে ন-ন’জন অধিনায়ক। যাঁদের মধ্যে সনাতনী ঘরানার মূর্ত প্রতীক হয়ে রাহুল দ্রাবিড় যেমন আছেন, ঠিক তেমনই রয়েছে চুলের অদ্ভুত ছাঁট নিয়ে বিরাট কোহলির যুবধর্মের সদম্ভ উপস্থিতি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাহরুখের নাচ।
এত পর্যন্ত পড়লে আশ্চর্যের কিছু পাওয়া যাবে না। এতে আর নতুন কী? আশ্চর্যের হচ্ছে, আইপিএলের উদ্বোধনেও সাবেক আর আধুনিকতার বিভাজনটা রয়ে গেল!
সত্যি কথাটা সহজে লিখে ফেলা যাক। শো-ফেরত শহরের ‘সিনিয়র সিটিজেন’-দের কথাবার্তায় পরিষ্কার, তাঁদের অনেকেরই অনুষ্ঠান ভাল লাগেনি। সেটা যদি আঁধার হয়, আলো অবশ্যই কলকাতার টি-টোয়েন্টি গ্রুপ। জেনিফার লোপেজের বদলে পিটবুল অনেকেরই তো শুনে বদহজম হচ্ছিল। প্রশ্ন উঠছিল, পিটবুল কে? তাঁর গান ক’জন শোনে, জানে? আদতে দেখা গেল গান শুধু নয়, তাঁর র্যাপের সঙ্গে কলকাতা নাচতেও জানে! এক দল উদ্দাম তরুণীর যে নাচ দেখে খোদ পুলিশেরই চোখ কপালে। ভিড় সামলানো বেমালুম বাদের খাতায়।
ক্রিকেটও কি পরোক্ষে জিতে গেল না? দেড় ঘণ্টার মধ্যে মাত্র মিনিট পাঁচেক ক্রিকেটের জন্য বরাদ্দ হলে কী হবে, তার মধ্যে ক্রিকেট শো শুধু হিটই নয়, একেবারে ব্লকবাস্টার! এমএসডি, গম্ভীরদের জন্য হুল্লোড়ের ঢেউ উঠবে প্রত্যাশিত। অপ্রত্যাশিত হল, রিকি পন্টিংয়ের জন্যও ওই একই শব্দব্রহ্ম সৃষ্টি। সৌরভ জমানায় যিনি শহরের অনেকেরই হিটলিস্টে ছিলেন!
উদ্বোধনের রোশনাই। ছবি: উৎপল সরকার
না, আজ সৌরভ ছিলেন না। আসেননি শেষ পর্যন্ত। হাতের কাছে আজ ‘দাদা’ থাকলে পঞ্চান্ন-ষাট হাজারের ‘মিনি’ কলকাতা আরও পাগল, আরও উন্মত্ত হত, সন্দেহ নেই।প্রথম পাতার পর কিন্তু যা হল, সেটাও কম নয়। শো শুরুর দু’ঘণ্টা আগে থেকে স্টেডিয়াম উপচে পড়েছে। সিট নিয়ে কাড়াকাড়ি। অবস্থা শেষ পর্যন্ত এমন দাঁড়াল যে, কিং খানের ‘বেটার হাফ’ গৌরী খান-কেও সিটের জন্য অপেক্ষা করতে হল দশ মিনিট! ক্যাপ্টেনরা পরে পিছনে চলে যাওয়ার পর সিট পেলেন মিসেস এসআরকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করতে দেখা যায়নি। কেকেআরের সহ-মালকিন জুহি চাওলাও ছিলেন না সেন্টার স্টেজে। কিং খান অবশ্য মঞ্চে ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বলে দিলেন, “মমতাদিকে ধন্যবাদ। আপনাদের ছাড়া এ জিনিস সম্ভব হত না।”
জিনিস বলে জিনিস! আকাশ থেকে একগুচ্ছ বেলুনে করে নেমে গম্ভীরের হাতে আইপিএল ট্রফি তুলে দিচ্ছেন এক বিদেশিনী অ্যাক্রোব্যাট।

উলটপূরাণ। আকাশ থেকে ট্রফি এল গম্ভীরের হাতে।
মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শ্যুটিং ফেলে রেখে শাহরুখের মঞ্চে দীপিকা পাড়ুকোনের ‘ককটেল শো’। ‘এক থা টাইগার’-এর বিখ্যাত গানের সঙ্গে ক্যাটরিনা কাইফের পারফরম্যান্স দেখে কারও কারও আবার মনে পড়ে গেল সলমন খানের কথা। সিনেমাটা তো সলমনের সঙ্গেই করেছিলেন ক্যাট। কেমন লাগল বলিউড-কুইনকে? কখনও সোনালি রাজবেশ, কখনও চোলির সঙ্গে হারেম প্যান্টস। বাংলা কথায়, ‘মাশাল্লাহ্’।
আর ‘উইনিং শট’-টা যাঁর ব্যাট থেকে আসার কথা ছিল, তিনিই মারলেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে ডনের মিউজিক, আর বাইকের কাটআউট ফুঁড়ে বাজিগরের বাদশাহী আবির্ভাব। এবং বাজিমাত। কখনও অতীতের সেই ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’-র যুগে কলকাতাকে আছড়ে ফেলা, কখনও বা চূড়ান্ত আধুনিক ‘ছম্মক ছল্লো’। উষা উত্থুপ আর বাপ্পি লাহিড়ীকে জড়িয়ে ধরে দিব্যি দু’টো নামও দিয়ে ফেললেন। রাম্বা আর সাম্বা!
‘‘বাংলা তোমাকে ধন্যবাদ। ‘সিটি অব জয়’ তোমাকে ধন্যবাদ। মমতাদিকেও ধন্যবাদ। যুবভারতীর সংগঠকদেরও ধন্যবাদ। আপনাদের সাহায্য ছাড়া এ জিনিস সম্ভব হত না। শো এখানেই শেষ হচ্ছে না। আরও চমক বাকি আছে।’’
মঞ্চ থেকে এক সময় মাঠেও নেমে পড়লেন। দর্শকদের উষ্ণতার টানে। যা দেখে টানা আধ ঘণ্টা চিৎকার, চেয়ারে উঠে নাচ, কানে তালা ধরিয়ে দেওয়া আবেগের সমুদ্রগর্জন।
কলকাতা তাঁর ছিল। আছে। থাকবে।
‘যব তক হ্যায় জান’!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.