মোটরচালিত ভ্যানের ধাক্কায় এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার তুলকালাম বাধল ভদ্রেশ্বরে।
ক্ষিপ্ত জনতা চালককে বেধড়ক মারধর করেন। ওই পথে চলে আসা অন্য কয়েকটি গাড়ির চালককেও মারধর করা হয়। বেআইনি মোটর ভ্যানে শিশুমৃত্যুর প্রতিবাদে দেহ আটকে রেখে অবরোধ করেন তাঁরা। চন্দননগরের এসডিপিও সৈকত ঘোষ বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে মারমুখী জনতাকে লাঠি উঁচিয়ে হঠিয়ে দেহ ময়না-তদন্তে পাঠান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ভদ্রেশ্বর অ্যাঙ্গাস নয়াবস্তির বাসিন্দা শিখর নায়েক (৫) বাড়ির কাছেই একটি রাস্তার কলে স্নান করছিল। স্থানীয় আর বি এস রোড ধরে মাল-বোঝাই একটি মোটরচালিত ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হঠাত্ই রাস্তার ধারে শিশুটিকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিখরের। চোখের সামনে শিশুটিকে মারা যেতে দেখে মেজাজ হারান নয়াবস্তির বাসিন্দারা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চালক পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্ষিপ্ত জনতা ধাওয়া করে তাঁকে ধরে ফেলেন।
শুরু হয় মারধর। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতার হাত থেকে ওই ভ্যানচালককে উদ্ধার করে চন্দননগর হাসপাতালে পাঠায়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি মোটরযানগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে। ওই মোটরযানের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা।
বস্তুত হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন এই মোটরচালিত ভ্যানের দাপাদাপি চলে। গ্রামীণ এলাকায় বেহাল পরিবহণ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে এই মোটরচালিত ভ্যানগুলির উপরে গ্রামের মানুষজন নির্ভর করতে বাধ্য হন। সেই সুযোগে এই গাড়িগুলি এখন শুধু মাল পরিবহণই নয়, রীতিমতো বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহণেও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
সিঙ্গুর, হরিপাল, চণ্ডীতলা, কাপাসহাড়িয়া, মগরা, ধনেখালি, পাণ্ডুয়া সর্বত্রই একই চিত্র। এই সমস্ত মোটর যানের দাপটে সরকারি রুটের ট্রেকার এবং অটো চালকেরা দিশেহারা। তাদের যাত্রীতে ভাগ বসানোয় রুটি-রুজিতে টান পড়ায় কিছু দিন আগেই জাঙ্গিপাড়া এবং শিয়াখালা এলাকায় প্রতিবাদে নামেন অটো চালকেরা। পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা।
বিচ্ছিন্ন ভাবে পুলিশ ওই সব বেআইনি যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তার স্থায়ী সমাধান কিছু হয় না। কারণ প্রশাসন জানে, গ্রামীণ পরিবহণে এই সব বেআইনি যানের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গ্রামবাসীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই তাঁরা কড়া পদক্ষেপ করেন না বলে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য।
যদিও এই বক্তব্যের বিরুদ্ধ মতও আছে। ওই সব মোটর যানের ব্রেক অত্যন্ত দুর্বল। তার কারণে প্রায়ই নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে গ্রামেগঞ্জে। সে জন্যই এই বেআইনি যানকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনেকেই আগ্রহী। চন্দননগরের এসডিপিও সৈকত ঘোষ বলেন,“ ভদ্রেশ্বরে মোটর ভা্যনটিকে পুলিশ আটক করেছে। ওই সব যানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় পুলিশ তা দেখছে।”
|
