চোর এসেছে বুঝতে পেরেছিলেন গৃহকর্তা। হইচই করে, ঢিল মেরে ভাগিয়ে দেন তাদের। খবর দেন পুলিশকে। পুলিশ এসে ঘুরে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই বাড়িতে ফের চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। কেন পুলিশ ডাকা হল, সেই ‘অপরাধে’ গৃহকর্তাকে বেধড়ক মারে। বছর তেরোর ছেলেকে রিভলভারের বাঁট দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ভাঙচুর চালায় বাড়িতে।
|
জখম কিশোর।
—নিজস্ব চিত্র। |
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ব্যান্ডেলের লিচুবাগান ভিউপার্ক এলাকায়। দুষ্কৃতীরা যে ভাবে আক্রোশ মেটাতে আক্রমণ চালাল, তাতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। আক্রান্ত গৃহকর্তা মুন্না সাউ বলেন, “প্রাণে মেরে দেবে বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছে ওরা। ভয়ে আছি।” হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”পুলিশ-কর্তার এই আশ্বাসে অবশ্য বিশেষ ভরসা রাখতে পারছেন না এলাকার মানুষ। গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। দিন কয়েক আগে মদ-গাঁজা খাওয়ার প্রতিবাদ করায় লিচুবাগান এলাকাতেই দুই ভাইকে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় একটি দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ী দুই ভাইকে ভোজালির কোপ মারে। একের পর এক চুরি-ছিনতাইয়ের উপরেও রাশ টানতে ব্যর্থ পুলিশ এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। দুষ্কৃতীরা এলাকার বহু মহিলার শ্লীলতাহানি করেছে বলেও দাবি তাঁদের। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পর পর কিছু ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্যি। পুলিশ সব ক্ষেত্রেই তদন্ত করছে। কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরাও পড়েছে।”
কী হয়েছিল সোমবার রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পেশায় ব্যবসায়ী মুন্নার বাড়িতে নির্মাণের কিছু কাজ চলছিল। ইমারতি সামগ্রী রাখা ছিল বাড়ির বাইরে। রাত ১টা নাগাদ লোহার রড চুরি করতে হাজির হয় কিছু দুষ্কৃতী। শব্দ পেয়ে মুন্না হইচই শুরু করেন। দুষ্কৃতীদের তাক করে ঢিল ছোড়েন। তাতে জখম হয় এক জন। তখনকার মতো পালিয়ে যায় চোরেরা।
খবর যায় তিন কিলোমিটার দূরে ব্যান্ডেল পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখান থেকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তদন্তকারী দল চলে আসে। রাত ২টো নাগাদ পুলিশ ফিরে যাওয়ার পরে শোওয়ার তোড়জোড় করছিলেন মুন্নারা। সে সময়ে ৮-১০ জনের একটি দুষ্কৃতী দল ফের তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। কাঠের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। কেন পুলিশকে খবর দিলেন মুন্না, সেই প্রশ্ন করেও হুমকি দিতে থাকে। গ্যাসের সিলিন্ডার উল্টে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। মুন্না প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর শুরু করে। দুষ্কৃতীরা বাবাকে মারছে দেখে ছুটে এসেছিল মুন্নার বছর তেরোর ছেলে সমন। হামলাকারীরা তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে মুন্নার স্ত্রী-র মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেয় তাঁকেও। তবে নতুন করে কিছু লুঠপাট করেনি।
পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দারা চোর এসেছে বুঝে বাইরে বেরিয়েছিলেন। দুষ্কৃতীরা সে বাড়িতেও হামলা করে। বাড়ির সামনে রাখা একটি মোটর ভ্যান ভেঙে দেয়। ঘণ্টাখানেক ধরে তাণ্ডব চালিয়ে এলাকা ছাড়ে তারা।
মুন্না ও তাঁর ছেলের চিকিৎসা করানো হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। এখনও আতঙ্ক কাটেনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সমনের। সে বলে, “বাবাকে মারছে দেখে ছুটে যাই। ওরা বন্দুকের বাঁট দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিল!”
|