দুশ্চিন্তার কিছু নেই, বলে যান সুদীপ্ত
ঝোরে কাঁদতে কাঁদতে এসএসকেএম হাসপাতালে ঢুকলেন শীর্ণ, ক্ষয়াটে চেহারার প্রবীণ। তাঁকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন এক যুবতী। সেই মেয়ে সুমিতাকে জড়িয়ে ধরে বাবা প্রণব গুপ্ত বললেন, “ছেলেটা সব সময়ে বলত রক্ত নয়, শান্তি চাই। আর তাকেই রক্তাক্ত করে মেরে ফেলল পুলিশ!”
মঙ্গলবার, সন্ধ্যা পৌনে ছ’টা। খাতায়-কলমে তখনও বেঁচে প্রণববাবুর ছেলে সুদীপ্ত গুপ্ত ওরফে পার্থ। এসএসকেএম হাসপাতালের মেন ব্লকের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ডাক্তারেরা এর মিনিট পঁচিশ বাদেই ‘মৃত’ ঘোষণা করবেন সুদীপ্তকে।
মা অমিতাদেবী মারা গিয়েছেন গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। মায়ের মতো গানের গলা ছিল সুদীপ্তরও। সংগঠনের নেতারা হাসপাতালে বলছিলেন, কেরলের সম্মেলনে খোলা গলায় কী দুর্দান্ত গণসঙ্গীতই না গেয়েছিলেন ২৩ বছরের ওই তরুণ। ভাল রবীন্দ্রসঙ্গীতও গাইতেন সুদীপ্ত। এসএফআই-এর সাংস্কৃতিক শাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। গানবাজনার রেওয়াজ যে বাড়িতে রয়েছে তার প্রমাণ বাড়ির নামেই ‘সরগম হাউস’। অন্য যা-ই ব্যস্ততা থাক, নিয়মিত রেওয়াজে ফাঁক পড়ত না সুদীপ্তর।
জখম সুদীপ্ত। প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইলে তোলা।
বাবা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ছিলেন। তিন বছর আগে অবসর নেন ‘ন্যাশনাল আ্যাটলাস থিমেটিক ম্যাপিং অর্গানাইজেশন’ থেকে। তাঁর পেনশনেই চলত বাপ-ছেলের সংসার। তবে ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল না প্রণববাবুর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র সুদীপ্ত সব সময়ে বলতেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্তপাতহীন বিপ্লবের শিক্ষা দিতে হবে। সেই ছেলেকে এ ভাবে হারিয়ে স্বভাবতই ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ বাবা। তিনি বলছেন, “ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাক আর শুনতে পাব না। বাড়ি গিয়েই বা কী করব। সেখানে তো কিছুই থাকল না।”
সুদীপ্তদের বাড়ি নিউ গড়িয়ার শ্রীনগর মেন রোডের গমকল এলাকায়। দিদি সুমিতার বিয়ে হয়েছে সুজিত সেনগুপ্তর সঙ্গে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন সুদীপ্ত। তার আগে পড়তেন নেতাজিনগর কলেজে। স্কুলজীবন কেটেছে নবকৃষ্ণ পাল হাইস্কুলে।
এসএফআই-এর পুলককুমার দাস, সায়ন চক্রবর্তী, মিহির সরকাররা বলছিলেন, পাড়ায়, কলেজে সবার প্রিয় ছিলেন শান্ত, মিশুকে স্বভাবের সুদীপ্ত। পোস্টার লেখা, বক্তৃতা, লেখালেখি সব কিছুতেই চৌখস। অল্প দিনের মধ্যেই কলেজের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। পরে নির্বাচিত হন এসএফআই-এর রাজ্য কমিটিতেও। সায়নের কথায়, “ওর উপরে কেউই রাগ করে থাকতে পারত না।”
এসএফআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুর ১২টার সময় হাসপাতাল থেকে দেহ পাওয়ার পর দলীয় অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে নেতাজিনগর কলেজে। এই ঘটনার প্রতিবাদে কাল, বৃহস্পতিবার সারা রাজ্যে ২৪ ঘণ্টার ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে এসএফআই।
গুরুতর জখম জোসেফ হোসেন। —নিজস্ব চিত্র
এ দিন দুপুর থেকে এসএসকেএম-চত্বরে উপচে পড়ছিল সুদীপ্তর বন্ধু, আত্মীয় ও রাজনৈতিক সতীর্থদের ভিড়। দিদি সুমিতা বলছিলেন পার্টি-অন্তপ্রাণ ভাইয়ের কথা। “সকালে পার্টির কাজে বেরিয়ে বাড়ি ফিরেও পার্টির লেখালেখি নিয়ে থাকত। ওর শান্ত, বিনয়ী স্বভাবের জন্য বিরোধী দলের ছেলেরাও ওকে ভালবাসত।” জামাইবাবু সুজিত কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আজ সকালেও পার্থকে বলেছিলাম, সাবধানে যেও। কোনও ঝামেলায় জড়িও না। ও হাসতে হাসতে বলেছিল, ‘আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনও দরকার নেই।’ ওর বাবা আর দিদিকে কী বলে শান্ত করব জানি না।” তাঁর অভিযোগ, “ডাক্তারবাবুরাই দেখিয়েছেন, পার্থর গায়ে অজস্র লাঠির আঘাতের চিহ্ন। কেন এমন হল, মাথায় ঢুকছে না।”
সুদীপ্তর ফোন থেকেই এ দিন এক বন্ধু ফোন করে দিদিকে খবরটা দেন। ভাই জখম শুনে তিনি তড়িঘড়ি এসএসকেএমে যান। সুমিতা বলেন, “ভাই আমার থেকে সাড়ে ১০ বছরের ছোট। ভাই নয়, ও আমার ছেলের মতোই ছিল। এখন হয়তো অনেক কিছুই হবে। কিন্তু ভাইকে আর ফিরে পাব না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.